এক সময়ে এই অঞ্চলের জীবনরেখা ছিল এই রেলপথ। পূর্ব রেলের অন্ডাল রেলওয়ে ট্র্যাকের অন্তর্গত এই লাইনে চলত একমাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন ‘পলাস্থলী’। সকাল ও সন্ধ্যায় দু’বার চলাচলকারী এই ট্রেনটি ভীমগড়, হযরতপুর, রসা, বড়রা অতিক্রম করে পলাস্থলী পৌঁছাত। প্রায় ২০-২৫ বছর আগে হঠাৎই বন্ধ করে দেওয়া হয় এই পরিষেবা। এর ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন।
advertisement
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা শেখ সেলিম আবেগপ্রবণ কণ্ঠে জানান, “আমাদের ছেলেবেলায় সকালে আর সন্ধ্যায় দু’বার ওই ট্রেনটা যেত। আমরা বলতাম ‘পলাস্থলী পার হচ্ছে’। তখন স্টেশনের টিকিটঘর খোলা থাকত, মানুষ গিজগিজ করত। কলেজ, বাজার, চিকিৎসা-সব কিছুর জন্য ওই ট্রেনটাই ভরসা ছিল। ট্রেনটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আমরা যেন একেবারেই বিচ্ছিন্ন।”
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
খয়রাশোল ব্লক এবং সংলগ্ন ঝাড়খন্ডের নলা ও কুণ্ডহিত ব্লক মূলত শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী অধ্যুষিত অনুন্নত অঞ্চল। এখানে নেই কোনো বড় শিল্প, নেই যথাযথ চিকিৎসা ও শিক্ষার সুবিধা। যোগাযোগ ব্যবস্থা দুর্বল, রাস্তার অবস্থা করুণ। এই অবস্থায় ভীমগড় ও পলাস্থলী রেল পরিষেবাই ছিল এলাকার মানুষের একমাত্র সেতুবন্ধন। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য ছাত্রছাত্রীদের এবং চিকিৎসার জন্য রোগীদের দূরবর্তী শহরে যাতায়াতে বিপুল সমস্যা তৈরি হয়েছে।
ভীমগড় ও পলাস্থলী রেলপথ শুধু যোগাযোগের মাধ্যম ছিল না, এটি ছিল এই অঞ্চলের মানুষের সাংস্কৃতিক আবেগের অংশ। সাহিত্যিক ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় ও কথাশিল্পী শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায় জীবনের বিভিন্ন সময়ে এই ট্রেন ব্যবহার করেছেন।