‘সমানাধিকার’ শুধু একটি শব্দ নয়, পুরুষদের সহায়তা ছাড়া জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার লড়াই লড়ছেন অসংখ্য মহিলা, প্রতিনিয়ত, নীরবে। পুনম তাঁদেরই একজন। মহম্মদবাজারের ভূতুড়া পঞ্চায়েতের শুকনা গ্রামের বাসিন্দা ওই তরুণী মাধ্যমিক পাশ। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান পুনমের ২০১০ সালে বিয়ে হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের দুমকার কাঠিজুড়িয়ার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে।
পুনম জানান, বিয়ের পরে কোনও সম্মান বা অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যত্ন কিছুই পাননি তিনি। তাঁর স্বামী তাকেবাপের বাড়িতে রেখে দিয়ে যান। ইতিমধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান পুনমের বাবা। শুকনা গ্রামেই ২০১১ সালের এপ্রিলে তাঁর মেয়ের জন্ম হয়।সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় দম্পতির। কেটে গেছে বেশ কিছু বছর। মেয়ে প্রিয়দর্শিনী এখন সিউড়ির একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
advertisement
তবে পুনম তাঁর লড়াইয়ে সব সময় পাশে পেয়েছেন মা পুষ্পলতাকে। পুষ্পলতা গ্রামের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সহায়িকা। প্রাথমিক ভাবে তাঁর সামান্য বেতনের ওপর নির্ভর করেই চলত তিনজনের সংসার। পুনমের মূল চাহিদা ছিল মেয়েকে ভালো একটি স্কুলে পড়ানো। সিউড়ির একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন মেয়েকে। পুনমের বাবার মোটরবাইকে চড়ে মা-মেয়ে প্রতি দিন সিউড়ি আসতেন। কিন্তু খরচ চালানো নাভিশ্বাস উঠছিল।
পুলিশের উদ্যোগে মহম্মদবাজারের হরিণশিঙায় আদিবাসী কচিকাঁচাদের পড়ানোর জন্য তৈরি হয়েছিল পাঠশালা। সেখানেই শিক্ষিকার কাজ পান পুনম। বেতন পাঁচ হাজার টাকা। বড় স্কুলে আসার আগে আদিবাসী শিশুদের তৈরি করে দেওয়াই তাঁর কাজ। মেয়ের সুবিধার্থে তিন বছর আগে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে সিউড়িতে এসে ওঠেন পুনমরা। ঘর ভাড়া সাড়ে তিন হাজার টাকা। সামান্য টাকা সম্বল করেই গড়ে তোলেন তিন প্রজন্মের সংসার। মেয়েকে বেসরকারি স্কুল থেকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করেন।
গত তিন বছর ধরে সকালে সিউড়ি থেকে হরিণশিঙা যাওয়ার সময় মা-কে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে নামিয়ে দিয়ে যান। ততক্ষণ মেয়ে বাড়িতে একাই থাকে। তার স্কুলের সময়ের আগে ফিরে আসেন পুষ্পলতা। পুনম জানান, “মেয়ে সকালে মুড়ি-বিস্কুট খেয়ে থাকে। স্কুলে যাওয়ার আগে ভাত রান্না হয় না। ভরসা মিড-ডে মিল। ঘরভাড়া ও বাইকের তেলের খরচে মোট আয়ের অর্ধেক খরচ হয়ে যায়। যেমন করে হোক মেয়েকে মানুষ করতে চাই।”
সৌভিক রায়