যাত্রায় ফুটে উঠত বেহুলা লখিন্দর, মহাভারত, রামায়ণ থেকে বেদের মেয়ে জ্যোৎঙ্গা, নটী বিনোদিনীর মত একাধিক বাস্তব এবং কাল্পনিক কাহিনি। তবে বাঙালির এককালের বিনোদন এর সেই যাত্রা আজ বিলুপ্তির পথে। এক সময় রমরমিয়ে চলা যাত্রাদলের অন্যতম শিল্পীরা বোলপুরের ভুবনডাঙা এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা বেশির ভাগই সেই সময় বোলপুর শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে স্থায়ী, অস্থায়ী কর্মী হিসেবে কাজও করতেন। তাঁদের নিজস্ব যাত্রার দলের নাম ছিল ‘মা মনসা অপেরা’। যাত্রা দলে সেই সময় ছিলেন ৪০-৫০ জন শিল্পী।
advertisement
নিজের কাজের ফাঁকে তাঁরা অবসরে বিনোদন চর্চায় মগ্ন থাকতেন। জেলা থেকে শুরু করে জেলার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় যেতেন যাত্রা অনুষ্ঠান করতে। প্রতি বছর শান্তিনিকেতনের পৌষমেলাতেও তাঁদের দলের যাত্রা অনুষ্ঠিত হত। এক সঙ্গে বহু মানুষ ভিড় করে দেখতেন তাদের যাত্রা। প্রসঙ্গত, এই মেলার সূচনা লগ্ন থেকে যাত্রাপালা ও আতশবাজি প্রদর্শন এর চল ছিল। যদিও বিভিন্ন কারণবশত আতশবাজি প্রদর্শন কয়েক বছর আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে যাত্রাপালা এখনও চলে আসছে। আজও সেই যাত্রায় দল রয়ে গিয়েছে। কিন্তু নেই সেই পুরনো শিল্পীরা। কেউ অসুস্থ, কেউ বা প্রয়াত হয়েছেন। আবার কেও অন্য পেশার সঙ্গে নিজেকে নিযুক্ত করেছেন।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বোলপুরের ভুবনডাঙার বাসিন্দা অশোককুমার মাঝি ও শম্ভুনাথ সিংহ। তাঁদের কাছ থেকে জানা যায় দু’জনেই বিশ্বভারতীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। তাঁদের যাত্রা দলে যাত্রাশিল্পীরা না থাকায় আজও পৌষমেলায় এলে তাঁদের মন কাঁদতে শুরু করে। একইসঙ্গে এই শিল্প আদতে আগামী প্রজন্মের কাছে টিকে থাকবে কিনা, সেই বিষয়টি নিয়েও তাঁরা উদ্বিগ্ন। অশোক বাবুর কথায়, ‘উনিশ বছর বয়স থেকে আমি যাত্রায় অভিনয় করছি। তবে কালের ক্রমে এখন সবই হারিয়ে গিয়েছে, বদলে গিয়েছে। যাত্রা দল থাকলেও শিল্পীরা নেই। আজও পৌষমেলার সময় যাত্রা না করতে পারার আক্ষেপ থেকে যায়।” সব মিলিয়ে মুখ ভার থাকে শিল্পীদের।






