বীরভূমের জেলা শাসক বিভিন্ন গ্রামে বিভিন্ন গ্রামে প্রশাসনের কাজে যাওয়ার সময় লক্ষ্য করেছিলেন ,সামাজিক জীবনে উন্নয়নের শ্রেষ্ঠতম লক্ষ্য হল মানব সম্পদের উন্নয়ন, যা সম্ভব শিক্ষার বিস্তার ও অগ্রগতি দ্বারা। শিক্ষার বিস্তার ও স্বশক্তিকরণই সমাজের প্রগতির মূল চাবিকাঠি। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই ভাবনায় ভাবিত হয়ে জেলার অপেক্ষাকৃত সামাজিক/ অর্থনৈতিক/ ভৌগোলিক/ সাংস্কৃতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করে সেই পরিবারের প্রথম প্রজন্মের শিক্ষার্থী যারা লেখাপড়ায় কোন সহায়তা পায় না, সেইসব শিশুদের নিয়মিত লেখাপড়ার অভ্যাস তৈরি করতে, বিদ্যালয়ের পাঠক্রমকে নিয়ে, বিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে সেইসব দেবশিশুদের মানসিক শারীরিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের লক্ষ্যে তৈরী হয় “আনন্দ পাঠ” পাঠশালা।
advertisement
বীরভূমের পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে, যে সকল পরিবারের শিশুদের গৃহশিক্ষক দেওয়া সম্ভব নয় এবং করোনা সময় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শিক্ষাগত যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিলো তা দূর করতে বীরভূম জেলা প্রশাসনের একটি মানবিক উদ্যোগ হলো *আনন্দপাঠ* পাঠশালা , বীরভূম জেলার প্রতিটি ব্লকে তৈরী করা হয়েছে এই পাঠশালা।এই আনন্দপাঠ কোন সমান্তরাল শিক্ষা ব্যবস্থা নয় বরং শিক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার একান্ত সহায়ক প্রচেষ্টা , আর তাতে পাঠ দানে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর শিক্ষিত যুবক যুবতীরা এগিয়ে এসেছে সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে।
মাসের পর মাস এই সব ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দান করেছে এই যুবক যুবতীরা , ছাত্রছাত্রীদেরও আগ্রহ বেড়েছে পড়াশুনার প্রতি। কোনো ছাত্র না এলে তার বাড়ি পৌছে খোঁজ খবর নেওয়া হতো , হঠাত হঠাতই জেলা শাসক জেলা প্রশাসনের কাজ সামলে চলে যেতেন এই সব আনন্দ পাঠশালা গুলিতে , দেখতেন কেমন পড়াশুনা হচ্ছে , মাঝেমাঝে তিনিও শিক্ষক হিসাবে পাঠদান করেছেন আনন্দ পাঠশালা গুলিতে। জেলা শাসক বিধান রায়ের এই ইচ্ছা বীরভূম জেলা প্রশাসনের মুকুটে যোগ করলো আরো এক পালক , পেল স্কচ অ্যাওয়ার্ড।
আনন্দ পাঠ পাঠশালার উদ্দেশ্য কী , জানিয়েছেন জেলা শাসক:-
১) পিছিয়ে পড়া গ্রাম বা পাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে মুক্ত প্রকৃতিতে খেলতে খেলতে, ছড়া বলতে বলতে, পাখির ডাক শুনতে শুনতে, প্রকৃতিকে চিনতে চিনতে বন্ধুত্বের মাধ্যমে লেখাপড়ার একটি অভ্যাস তৈরি করা।
আরও পড়ুন: আধার কার্ডের কারণেই জীবনে নামল অন্ধকার, অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উধাও দেগঙ্গার ব্যক্তির!
২)লেখাপড়া সম্পর্কে ভীতি ও উদাসীনতা দূর করে, একটি আনন্দদায়ক শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা যেখানে শিশুরা অন্তরের আহ্বানে ছুটে আসবে।
৩)লেখাপড়া ছাড়া অন্যান্য নান্দনিক বিষয়ের উপর যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করা
৪)শিক্ষার উপযোগী পরিবেশ এবং বাড়িতে শিক্ষার ধারাবাহিকতা সুনিশ্চিত করা।
পিছিয়ে পড়া গ্রাম পাড়া বা মহল্লায় বসছে এই আনন্দ পাঠের আসর। সকাল ৭- ৯ টা এবং বিকেল ৪- ৬টা পর্যন্ত পাঠদান চলছে। আনন্দপাঠ দান করছেন ওই পাড়ার একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি শিক্ষক। এছাড়া নান্দনিক পাঠদানের জন্য থাকছেন বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। আনন্দ পাঠের মাধ্যমে লেখাপড়ার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সাথে সাথে শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার অন্বেষণ ও তার বিকাশ ঘটানো অন্যতম উদ্দেশ্য। এছাড়া বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা যাতে শিক্ষার মূলধারাই সম্পৃক্ত হতে পারে তার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: মোবাইলের নেশা কতটা মারাত্মক হতে পারে! জীবন দিয়ে বুঝিয়ে গেল দুই বন্ধু
শিশুরা যাতে সব ধরনের সরকারি সুবিধা পাই তা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে আনন্দ পাঠের মাধ্যমে।লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রকৃতি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চেতনার জাগরণ তৈরি করা, শিল্প সংস্কৃতি তে প্রতিভা সম্পন্ন শিশুদের সুযোগ করে দেওয়া এর উদ্দেশ্য।আনন্দপাঠে শ্রেণি ভিত্তিক নয়, বৌদ্ধিক ও মানসিক স্তরের উপর ভিত্তি করেই ক্লাস নেওয়া হয়। বেস লাইন সার্ভের মাধ্যমে কোন শিশু কোন স্তরে আছে তা দেখে তার উপর ভিত্তি করে তাকে পরবর্তী স্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। এটি বিদ্যালয় শিক্ষার কোন বিকল্প মাধ্যম নয়, বরং বিদ্যালয় শিক্ষার পরিপূরক একটি ব্যবস্থা।এর ফলে স্কুলে অনুপস্থিতির সংখ্যা কমেছে যেমন তেমনি বেড়েছে শিশুদের সক্রিয়তা।