বহু বছর আগে কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে লোভনীয় সরকারি চাকরি ছেড়ে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের সেবার কাজের ব্রত নিয়ে গ্রামবাসীর চিকিৎসায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন তিনি। নানা যাত-প্রতিঘাত,অভাব অভিযোগ সত্ত্বেও সেই ব্রত পালন করছেন ৯৮ বছর বয়সেও।প্রসঙ্গত, বীরভূম জেলার লাভপুরের বাসিন্দা সুকুমার চন্দ্র ওরফে বিশু ডাক্তার বাবু। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিলেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের কাটনি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির হাসপাতালে বহু মূল্যের বেতনের চাকরির সুযোগও এলেও করা হয়নি। কারণ, তখন লাভপুরে চিকিৎসা পরিষেবা ছিল খুব সমস্যার কারণ।
advertisement
গ্রামের মানুষকে সঠিক শারীরিক পরীক্ষার জন্য ছুটে যেতে হতো দূর শহরে। আজ থেকে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত বিনা চিকিৎসায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আর এই মর্মান্তিক বিষয়টি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাবিয়ে তোলে। বিশু বাবুর বাবা লাভপুর হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন অন্যদিকে শরৎচন্দ্র ছিলেন তারাশঙ্করের বাল্যবন্ধু। সেই সুবাদে তিনি বিশুকে ডেকে বলেন, ‘তোমার চাকরিতে যাওয়া চলবে না। তুমি গেলে গ্রামবাসীরা বিনা চিকিৎসা মরবে। গ্রামে গিয়ে তাঁদের সেবা করো।’ নির্দেশ উপেক্ষা করতে পারেননি বিশু। সেই সময় মাত্র এক টাকা ভিজিটের বিনিময়ে গ্রামে ফিরে চিকিৎসা শুরু করেন। আজও তাঁর নির্দিষ্ট ভিজিট নেই।
যে যা হাতে তুলে দেন তাই নেন। কেও না দিতে পারলে তিনি কোনও ধরনের টাকার আবেদন করেন না। এমনকী বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে বিনামূল্যে পরিষেবা দেন তিনি নিজের ইচ্ছেই। রাজ্য সরকার ২০২০-এ বিশুকে জীবনকৃতি সম্মান দিয়েছে। বছর দু’য়েক আগে ফুসফুসে সংক্রমণ হয়ে মারা যান তাঁর ৬০ বছরের ছেলে চিকিৎসক সৌমিত্র চন্দ্র। সে দিন, এমনকী তাঁর শ্রাদ্ধের দিনেও রোগী দেখেছেন। গত সপ্তাহে হারিয়েছেন ৮৯ বছরের স্ত্রী রাধা-কে। তাঁর স্ত্রী চার মাস শয্যাশায়ী ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর আগের দিনও রোগী দেখেছেন বিশু। প্রখ্যাত নাট্যকর্মী উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, বলেন, ‘স্ত্রী-র মৃত্যুর দিন তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। মৃত্যু শংসাপত্র(ডেথ সার্টিফিকেট) লেখার সময়ে তাঁর হাতে থাকা পেন কেঁপে যাচ্ছিল।’ বিশু বাবু বলেন , ‘এই দিনটাও আমাকে দেখতে হবে সেটা কোনও দিন ভাবিনি আমি।’





