বাড়ির সন্তানরা যখন প্যান্ডেল থেকে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ায়, তখন পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরের পাউসি অন্তর্দ্বয় অনাথ আশ্রমের আবাসিকরা নিজেরাই আয়োজন করে দুর্গোৎসবের। শতাধিক ছেলে-মেয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এই পুজো কেবল আচার নয়, আনন্দ ও উল্লাসের এক ভিন্ন দিগন্ত। পাউসি অন্তর্দ্বয় অনাথ আশ্রমে শতাধিক শিশুর পরিবার। পুজোর আগেই তারা কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির হাত ধরেই শুরু হয় আয়োজন। প্রতিমা গড়া থেকে শুরু করে আমন্ত্রণপত্র লেখা, সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা – সবকিছুতেই সমানভাবে অংশ নেয় তারা।
advertisement
আরও পড়ুন : অসহায় অবস্থা! চারদিন ধরে তীব্র সংকটে পড়ুয়ারা! উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে কী চলছে?
মহালয়া থেকেই শুরু হয় উৎসবের আমেজ। প্রতিদিন অনুশীলন চলে নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকের। নতুন জামা কাপড়ে তারা সেজে ওঠে। আশ্রমের প্রতিটি ছেলে-মেয়ের পুজোয় চার-পাঁচটি নতুন জামা হয়, যা পুজোর দিনগুলিকে তাদের কাছে করে তোলে আরও রঙিন। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে আশ্রমের চত্বরে থাকে এক অন্যরকম পরিবেশ। অঞ্জলি, ভোগ, আরতি – সবই চলে ভক্তিভরে। তবে শুধু ধর্মীয় আচার নয়, সমানভাবে গুরুত্ব পায় আনন্দ।
আরও পড়ুন : ফসল কাটা কয়েকদিন বাকি ছিল, হঠাৎ জঙ্গল ফুঁড়ে বেরোল দৈত্যাকার প্রাণী! সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার
খাওয়া-দাওয়া, গান-বাজনা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান -সব মিলিয়ে আশ্রমে চলে এলাহী আয়োজন। শুধু আশ্রমের শিশুরা আনন্দে মেতে ওঠে না, বাইরের বহু মানুষও আসেন তাদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। দর্শনার্থীরা আশ্রমের প্রতিমা দর্শন করেন, আবার শিশুদের সঙ্গে একসঙ্গে উপভোগ করেন নাচ-গান আর হাসি-আনন্দে ভরা পরিবেশ।
অভাব-অনটনের মধ্যেও এই পুজো তাদের কাছে এক অনন্য উৎসব। কয়েকটা দিন যেন তারা ভুলে যায় সব দুঃখ, কষ্ট আর অভাব। তাদের কাছে দুর্গাপুজো মানে নতুন জামা, আনন্দে ভরা রাত-দিন এবং একসঙ্গে কাটানো অসাধারণ কিছু মুহূর্ত। সমাজের মূলস্রোত থেকে দূরে থাকা এই ছোট ছোট প্রাণদের কাছে দুর্গাপুজো যেন নতুন করে বাঁচার শক্তি জোগায়।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
পাউসি অন্তর্দ্বয় অনাথ আশ্রমের দুর্গাপুজো এক অভিনব দৃষ্টান্ত। পরিবার না থাকলেও সমাজের সবার ভালবাসা নিয়ে এই শিশুরা পুজোর আনন্দে মাতোয়ারা হয়। তাদের কাছে দুর্গাপুজো কেবল দেবীর আরাধনা নয়, জীবনের প্রতিটি কষ্টকে ভুলে থাকার এক মহোৎসব, যা শেখায়- অভাব যতই থাকুক, আনন্দ ভাগাভাগি করলে উৎসব পূর্ণতা পায়।





