বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই মেলায় আসেন। ভক্তদের দাবি, গঙ্গাসাগর মেলা, জয়দেবের মেলার থেকে কোনও অংশে কম ভিড় হয় না এই সতী মায়ের মেলায়। নদিয়ার কল্যাণীর ঘোষপাড়ায় অবস্থিত বিখ্যাত সতী মায়ের মন্দির। বৈষ্ণবদের কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মানবী দেবী বলে পরিচিত সতী মা। দোল পূর্ণিমার দিন দেবীর পুজোকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই মন্দির প্রাঙ্গনে ভক্তদের ভিড় লেগে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দেন, অনেকে আবার দন্ডি কাটেন। পুকুরে ডুব’ও দেন অনেকে।
advertisement
আরও পড়ুন: লিচুতে ভরে উঠবে গাছ, শুধু এই নিয়মটা মানুন
এখানে আসা ভক্তদের বিশ্বাস, পুকুরে স্নান করে ডালিম গাছে ঢিল বাঁধলে দেবী মনস্কামণা পূর্ণ করেন। দোলের দিন বেশি করে সেই ছবি ধরা পড়ল। পুজো উপলক্ষে এবছরও যথারীতি বিরাট মেলা বসেছে। একসময় প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে সতীমায়ের মেলা বসত। বর্তমানে তা বাড়তে বাড়তে ৩০ একর এলাকায় মেলা বসছে। এই মেলা পরিচালনা করে কল্যাণী পুরসভা।
সতী মায়ের মেলাকে ঘিরে এক ইতিহাস আছে। কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হলেন নদিয়ার ঘোষপাড়ার আউলচাঁদ। ভক্তরা তাঁকে গোরাচাঁদ নামে ডাকতেন। অনেকে তাঁকে শ্রীচৈতন্যের অবতার হিসেবেও মনে করতেন। এই ঘোষপাড়ারই বাসিন্দা ছিলেন রামশরণ পাল। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল সরস্বতী। কথিত আছে, মরণাপন্ন সরস্বতীর সারা গায়ে পুকুর থেকে মাটি এনে লেপে দিয়েছিলেন আউলচাঁদ। তাতেই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন সরস্বতী। পরবর্তীকালে বাড়ির ডালিম গাছের নীচে দীর্ঘ সাধনার পর তিনিই হয়ে ওঠেন সতী মা। আউলচাঁদের পর সতী মা হয়ে ওঠেন কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রধান।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
এখানে প্রচলিত বিশ্বাস হল, সরস্বতী যে ডালিম গাছের নিচে বসে সাধনা করেছিলেন, সেই ডালিম গাছে ঢিল বাঁধলে সব ইচ্ছাপূরণ হয়। ঘোষপাড়ায় তাঁর নামাঙ্কিত মন্দির চত্বর এবং সমাধিক্ষেত্রে ভক্তরা গিয়ে পুজো দেন। পুজোর ডালিও মন্দির চত্বরেই একাধিক ব্যক্তি বিক্রি করেন। ডালিতে ঢিলের জায়গায় দেওয়া থাকে সুতো বাঁধা মাটির ঘোড়া। মন্দিরের কাছেই রয়েছে পুকুর। সেই পুকুরে স্নান করে ভক্তরা মন্দিরে পৌঁছে ডালিম গাছে ঢিল বাঁধেন। আবার মনস্কামনা পূরণ হলে এসে ডালিম গাছ থেকে ঢিল খুলে ফেলতে হয়। এটাই সতী মায়ের মন্দিরের নিয়ম।
এখানে নিত্যপুজোর পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার বিশেষ কীর্তনের আসর বসে। দোলের সময় সতী মায়ের এই মেলাকে কেন্দ্র করে দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার ভক্ত ছুটে আসেন।
মৈনাক দেবনাথ