বর্ধমান শহর থেকে বারো কিলোমিটার দূরে সবুজে ঘেরা গ্রাম সোনাপলাশি। এই গ্রামেই ১৯১১ সালে এক বর্ধিষ্ণু পরিবারে জন্ম নবদ্বীপ হালদারের। গ্রামের স্কুলেই প্রাথমিকের পড়াশোনা করেন তিনি। এর পর বর্ধমানের মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তী সময়ে পরিবারের অন্যান্যদের সঙ্গে কলকাতা চলে যান। তবে গ্রামের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বরাবর। গ্রামের গাজন ও দুর্গাপুজোয় নিয়ম করে আসতেন। কলকাতা থেকে দল নিয়ে এসে যাত্রাপালায় অভিনয় করে যেতেন। শোনাতেন হাস্য কৌতুক।
advertisement
আরও পড়ুন: 'তোমাকে যদি আদালতে ল্যাজে গোবরে না করি আমার নাম অভিষেক না'
আরও পড়ুন: বিলকিস বানোর দোষীদের মুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক 'আহিম'-এর, জানুন
নবদ্বীপ হালদার বাংলা চলচ্চিত্রে আসেন তিরিশের দশকে। কৌতুক অভিনেতা হিসেবে বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন। ভাঙা গলা ও অভিনয় কৌশল তাঁকে জনপ্রিয়তার শিখরে নিয়ে গিয়েছিল। দুই বেচারা, মানিক জোড়, হানাবাড়ি, সন্ধ্যাবেলার রূপকথায় তিনি অভিনয় করেন। উত্তম সুচিত্রার সঙ্গে সাড়ে চুয়াত্তরে তাঁর অভিনয় আজও বাঙালির মুখে মুখে ফেরে। বহু শ্রুতি নাটকে তিনি কন্ঠ দিয়েছেন। গ্রামবাসীরা বলছিলেন, অনেকেই কথার টানে নবদ্বীপ হালদারকে পূর্ব বঙ্গের বাসিন্দা ভেবে থাকেন। আসলে তিনি আমাদের এই গ্রামের মানুষ ছিলেন। ছোট বেলায় কলকাতা চলে গেলেও বরাবর এই গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে গেছেন।
তবে অনেক বছর আগেই ভেঙে পড়েছে নবদ্বীপ হালদারের বসত বাড়ি। দালান বাড়ির জায়গায় এখন শুধুই ঝোপঝাড়। শাখা মেলেছে বট ও অশ্বত্থ। এলাকার বাসিন্দারা গড়ে তুলেছে সোনাপলাশি নবদ্বীপ হালদার স্মৃতি সংঘ। তবুও নতুন প্রজন্মের কাছে আজ উপেক্ষিত সোনালী দিনের এই শিল্পী। তাই পুজোর দিনগুলিতে নিয়ম করে দুবেলা নবদ্বীপ হালদারের হাস্যকৌতুক বাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গ্রামের পাঁচটি বারোয়ারি পুজো কমিটি। গ্রামবাসীরা চান, শিল্পীর জন্মভিটেতে গড়ে উঠুক সংগ্রহশালা, স্মৃতিসৌধ।
শরদিন্দু ঘোষ