স্থানীয় ভট্টাচার্য পরিবারের নারায়ণদাস ভট্টাচার্য ও শান্তিলতা দেবীর কন্যা নিরুপমা চক্রবর্তী মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। শ্বশুর বাড়িতে একদিন নিরুপমা দেবী স্বপ্নে দেখেন, তাঁর বাপের বাড়িতে পঞ্চাননের পুজো হচ্ছে। পঞ্চানন মন্দিরের পাশে পুকুরের মধ্যে একটি ঘট অবহেলায় পড়ে রয়েছে। স্বপ্নেই তিনি দেখেন, সেই ঘটটিকে তুলতে গেলে ঘটের মধ্য থেকে এক কালীমূর্তি আবির্ভূত হলেন এবং নিরুপমাদেবীকে নির্দেশ দিলেন, ঘটটি তুলে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিছুদিন পর নিরুপমা দেবী বারুইপুর এলে, ফের একই স্বপ্নাদেশ পান।
advertisement
মা কালীর এই স্বপ্নাদেশের কথা শুনে নিরুপমা দেবীর জ্যাঠামশাই দুর্গাদাস ভট্টাচার্য ঘটটি খুঁজে পান। ১০ শ্রাবণ বাংলার ১৩৭৩ সনে মঙ্গলবার নবমী তিথিতে জল থেকে ঘট তুলে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয়। স্থানটির নাম হয় শিবানী পীঠ। নিরুপমা দেবী ছাড়াও, ভট্টাচার্য পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ অনুরূপা দেবীও স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। দুর্গাদাস স্বপ্নাদেশ পান যে তাঁর মেয়ের নামে মা কালীর নাম রাখতে হবে। সেই মতো শিবানীর নামেই মায়ের নাম হয়।
মন্দিরে অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন কালিকা, দেবীর বিগ্রহ দারু নির্মিত নিম কাঠের। সালঙ্কারা দেবী চতুর্ভুজা। বিগ্রহের উচ্চতা প্রায় চার ফুট, বিগ্রহটি তৈরি করেন বারুইপুরের স্থানীয় শিল্পী। দেবীকে নিত্য আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। ভোগে থাকে সাদাভাত, ভাজা, তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি। এখন বলিদান প্রথা বন্ধ। পীঠস্থানে কালীবিগ্রহ ছাড়া পারিবারিক নারায়ণ, গোপাল রয়েছেন, দু’টি শিবমন্দির রয়েছে কেদারনাথ ও বিশ্বনাথ। বাংলার ২৫ কার্তিক, ১৩৭৩ সনে ঘোর অমাবস্যায় দেবীর মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল মন্দিরে। দেবী কালিকার হাতে থাকে রুপোর খর্গ, আরেক হাতে নর মুণ্ড। মাথায় অপরূপ রুপোর মুকুট। মায়ের ইচ্ছানুসারে তাঁর নামকরণ হল ভবাণী। শিবানী পীঠের মা ভবাণী। পদতলে বিরাজ করেন শ্বেত শুভ্র মহাদেব। একেবারে বাঙালির নিজস্ব শিব। দেবীর গাত্রবর্ণ কালো।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
শিবানী পীঠের প্রতিষ্ঠাতা দুর্গাদাস ভট্টাচার্য ছিলেন একজন সিদ্ধ পুরুষ। তাঁর মূর্তিও মায়ের মন্দিরের পাশেই রাখা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন মহাপুরুষদের মূর্তি রয়েছে এই মন্দিরে। কালী পুজোর দিন শিবানী পীঠ মন্দিরে অমাবস্যার পুণ্য তিথিতে মায়ের পুজো হয়। ভিড়ে উপচে পড়ে মন্দির। এছাড়া বছরের প্রতি দিনই মন্দিরে ভক্তদের আনাগোনা লেগে থাকে। স্থানীয়রা বলেন, সুবুদ্ধিপুরের মা শিবানী কখনও ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না। মনের ইচ্ছা মায়ের সামনে প্রকাশ করলেই তা পূর্ণ হয়। মায়ের সঙ্গে মন দিয়ে ভক্তি ভরে কথা বললে মা কথা বলেন, ভক্তদের এমনটাই বিশ্বাস।