নীলপুজো বা নীল ষষ্ঠী বাংলার একটি প্রাচীন লৌকিক উৎসব। সাধারণত চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন নীল পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব আসলে শিবের বিয়ে বা শিব দুর্গার বিয়ে নামে পরিচিত। হিন্দু রমনীরা সন্তানের মঙ্গল কামনায় এদিন উপবাস করেন। নিষ্ঠাভরে শিবের পুজো করেন তাঁরা। সন্ধ্যার পর শিবকে উদ্দেশ্য করে বাতি বা প্রদীপ জ্বেলে ফলাহারের মাধ্যমে উপবাস ভঙ্গ করেন। এদিন অন্ন স্পর্শ করেন না অনেকেই। এ রাজ্যের অনেক জায়গাতেই গাজনের সন্ন্যাসীরা নীলকে ফুলের মালায় সাজিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভিক্ষা করেন। বাড়ির মহিলারা সন্ন্যাসীদের ভিক্ষের ঝুলিতে কাঁসার থালায় রাখা চাল আলু সবজি ঢেলে দেন।
advertisement
করোনা সংক্রমণ বাধ সাধলো বাংলার এই লোক উৎসবে। অনেক জায়গাতেই নীলকে সাজিয়ে বার করতে পারলেন না গাজনের সন্ন্যাসীরা। ঘরে ঘরে ফাঁকা পড়ে থাকলো ভিক্ষার থালা। মন্দিরে মন্দিরে নীলের পুজো হলো নিয়মরক্ষার মতো করে। কোনও রকম আড়ম্বর লোক সমাগম ছাড়াই পুজো নিলেন নীল। অনেক মহিলাই এদিন পুজোর ডালি হাতে ঘরের বাইরে পা রাখেননি। বাড়িতে অন্যান্য দেবদেবীদের সঙ্গে নিত্যপুজো পাওয়া শিবের মূর্তি বা ছবির সামনেই পুজো দিয়ে প্রদীপ বা মোমবাতি জ্বালিয়ে সন্তানের মঙ্গল কামনা করেছেন তাঁরা। তবে মন্দির লাগোয়া বাড়ির মহিলারা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিড় এড়িয়ে পুজো দিয়েছেন।
বর্ধমান সর্বমঙ্গলা মন্দিরের ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, অন্য বার নীলের পুজো দিতে সকাল থেকেই বহু মহিলা ভিড় করেন। বর্ধমান শহরের বাইরে থেকেও আসেন অনেকেই। কিন্তু এবার করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ভিড় না করার জন্য ভক্তদের কাছে আমরা আবেদন রেখেছিলাম। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ভক্তরা মন্দিরে ভিড় না করে বাড়িতে থেকেই শিবের কাছে সন্তানের মঙ্গল কামনা করেছেন। মন্দিরে নিয়ম মেনে পুজো করেছেন পুরোহিতরা।
Saradindu Ghosh