এবছর ৩০০ বছরে পদার্পণ করল সুয়াতা জমিদার বাড়ির পুজো (Bangla News) । সাবেকি ধারা বজায় রেখে একচালার দুর্গা (Durga Puja 2021) পুজিত হয় জমিদার বাড়িতে। ঘোষ পরিবারের কোন পূর্বপুরুষ শারদোৎসবের সূচনা করেছিলেন তা না খোঁজ পেলেও এই পুজো যে ৩০০ বছরের প্রাচীন তা জানিয়েছেন এই পরিবারেরই সদস্য শুভেন্দু ঘোষ।
advertisement
শুভেন্দু বাবু বলেন, পুরাকাল থেকেই নারায়ণ সেবার রীতি ছিল পরিবারে। তারপর শুরু হয় দুর্গাপুজো (Durga Puja 2021)। নারায়ণ সেবক ফলে বৈষ্ণব মতেই পুজিত (Bangla News) হন ঘোষ পরিবারের দেবী। তাই এখানে রক্তবলি প্রথা নেই। বলি দেওয়া হয় বাতাসা। অষ্টমী তিথিতে সন্ধিপুজোর সময় এই বলি হয়। পারিবারিক নিয়ম অষ্টমী পুজো ও সন্ধিপুজো একাসনে অনুষ্ঠিত হবে। অর্থাৎ অষ্টমী তিথিতে দেবীর আরাধনায় বসেন পুরোহিত সন্ধিপুজো শেষে তিনি ওঠেন আসন ছেড়ে।
চতুর্দশী তিথিতে শ্যামাপুজোর মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার পুজো শুরু হয়। মহালয়ার দিন চণ্ডীপাঠ হয়। ওইদিনই শ্যামার নিরঞ্জন হয়। মহালয়ার পর থেকে পঞ্চমী তিথি পর্যন্ত চলে ঘট পুজো। পঞ্চমীতে চক্ষুদান হয়ে ষষ্ঠীতে বোধন। যথারীতি শালগ্রাম শিলাকে মূল মন্দির থেকে নিয়ে আসা হয় দুর্গামন্দিরে। গণেশ পুজো, নারায়ণ পুজোর পর হয় দুর্গাপুজোর সূচনা।
পুরাণ মতে সন্ধিপুজোর সময় দেবী চন্ডীরূপ ধারণ করেন। তাই সন্ধিপুজোর আগে শালগ্রাম শিলা ঢেকে দেওয়া হয় লাল শালুতে। ধুনো পোড়ানো হয় সন্ধি পুজোর সময়। বাড়ির মহিলারা মাথার ওপর একটি করে মাটির সরা রেখে দেবীর দিকে মুখ করে বসেন। সে এক অসাধারণ দৃশ্য!
কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকে সকলের মুখ। মাথার উপর রাখা সরার মধ্যে ধুনো দিয়ে জ্বালানো হয় আগুন। দেবীর উদ্দেশ্যে এভাবেই ভক্তি নিবেদন করেন পরিবারের মহিলারা। অষ্টমী তিথির শুরুতে জ্বালানো হয় ঘিয়ের প্রদীপ, যা নবমী তিথি শুরুর আগে পর্যন্ত জ্বলে। পুজোয় দেবীকে পরানো হয় শিউলি ফুলের মালা। ব্যাবহৃত হয় ১০৮টি পদ্ম, ১০৮ টি বেলপাতা।
একটি বিশেষ নিয়ম হল ঘোষ পরিবারে দেবী দুর্গার সন্ধ্যারতির মূল উপকরণ মুড়কি। এটি ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ। নবমীর দিন যজ্ঞ হয়। ২৮টি ত্রিপত্র সম্বলিত বিল্বপত্র ও সাদা করবী ফুল দিয়ে পুজো করা হয় দেবীর। এই দিনই আয়োজন করা হয় নরণারায়ন সেবার।
আরও পড়ুন: জীবনে কত রকম ঘুড়ি আপনি দেখেছেন? এবার পুজোয় এই মণ্ডপে গিয়ে মিলিয়ে নিন...
যদিও কোভিডের জন্য এই সেবায় হয়েছে কাটছাঁট। বসিয়ে লোক খাওয়ানোর পরিবর্তে ব্যবস্থা করা হয়েছে প্যাকেটের। প্যাকেটে যে খাবার থাকে তা সবই নিরামিষ। কারণ বৈষ্ণব মতে পুজো হয়, তাই নিরামিষ ভোজন করেন সুয়াতা জমিদার বাড়ির সদস্যরা। আর দশমীতে হয় অপরাজিতা পুজো। এই পুজোতে মূল উপপাদ্য হল অপরাজিত ফুল।
এরপর উমার যাওয়ার পালা। বরণ ,সিঁদুর খেলা এসবের মধ্য থেকেই বিদায় জানানো হয় মাকে। বিসর্জন পথে দিকে রওনা দেয় দেবী। যদি কোন বছর বৃহস্পতিবার পড়ে যায় দশমী তিথি। তাহলে সে বছর একাদশীতে প্রতিমা বিসর্জনে যায়। ঘোষ পরিবারের আরও একটি রীতি রয়েছে, সারাবছর দেবীর মঙ্গলঘট পুজিত হয় এই পরিবারে। প্রতিটি ঘরে ঘরে লক্ষ্মী পুজো হয় না এই পরিবারে। কোজাগরী তিথিতে দুর্গা মন্দিরেই আরাধনা করা হয় মা লক্ষ্মীর।
মালবিকা বিশ্বাস