পশ্চিম বর্ধমান ও পূর্ব বর্ধমান জেলার সীমানায় অবস্থিত পানাগড়। সেখান থেকে এক ফালি রাস্তা চলে গিয়েছে কসবার দিকে। রাস্তার দুই দিকে কাশফুলের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চলে গিয়েছে মাটির রাস্তা। এই লাল মাটির রাস্তা দিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন চম্পকনগরে। চোখের সামনে দেখতে পাবেন মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লিখিত একাধিক জায়গা।
মনসামঙ্গল কাব্য অনুযায়ী চাঁদ সওদাগরের তরী ডুবিয়ে দিয়েছিলেন মনসা। তারপর চম্পক নগরীতে বসবাস শুরু করেন চাঁদ সদাগর। প্রতিষ্ঠা করেন শিবলিঙ্গের। একনিষ্ঠ ভক্ত হওয়ার জন্য দেবী মনসাকে পুজো দিতে চাননি তিনি। চম্পকনগরে গেলে আপনি চাঁদ সদাগরের প্রতিষ্ঠা করা সেই শিবলিঙ্গ দেখতে পাবেন। যদিও এই শিবলিঙ্গ যে চাঁদ সদাগরই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তার উপযুক্ত কোনও প্রমাণ নেই। তবে স্থানীয় মানুষের অটুট বিশ্বাসে, এই শিবলিঙ্গটি আজ চাঁদ সদাগরের শিবলিঙ্গ বলেই পরিচিত।
advertisement
শিবলিঙ্গের পুরনো মন্দির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে, নতুন করে মন্দির তৈরি হয়েছে। সেখানেই নিত্য পুজো হয় মহাদেবের। চম্পকনগরে রয়েছে বেহুলা লক্ষীন্দরের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাসরঘর। এখানেই মনসার নির্দেশে কালনাগিনী দংশন করেছিল লক্ষীন্দরকে। বাসর ঘরের বেশিরভাগ অংশই আজ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে ওই জায়গায় নিজের প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘর। এছাড়াও এখানে ভগ্নপ্রায় নীলকর আদায়ের অফিস দেখতে পাবেন।
তবে শুধু ইতিহাস নয়। পানাগড়ের কসবার কাছে অবস্থিত এই চম্পকনগরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও দারুণ। চারপাশে সবুজের হাতছানি, কাশফুলের জঙ্গল আপনার দুচোখ শান্তিতে ভরিয়ে দেবে। চম্পকনগর থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই রয়েছে রনডিহা ব্যারেজ। ডিভিসি কর্তৃপক্ষ দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ছাড়া জল কিছুটা সংরক্ষণ করতে, এখানে একটি চেক ড্যাম তৈরি করেছিল। চড়ুইভাতির জন্য এই এলাকা বেশ পরিচিত। তবে বহু পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনও তেমন পরিচিতি পায়নি চম্পকনগর।
যদি আপনি চম্পকনগর ঘুরতে যান, তাহলে রাত্রিবাসের সুযোগ-সুবিধা পাবেন না। রাত্রিবাস করতে চাইলে আপনাকে রনডিহা ব্যারেজের কাছে অবস্থিত সেচ দফতরের বাংলোয় থাকতে হবে। তার জন্য বুকিং আগে থেকেই করে রাখতে হবে। এখানে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা পেয়ে যাবেন। আর দুপুরে খাওয়া দাওয়ার জন্য ছোটখাটো হোটেল পেয়ে যাবেন চম্পকনগরে।
পশ্চিম বর্ধমান থেকে চম্পকনগরের দূরত্ব খুব বেশি নয়। আসানসোল, দুর্গাপুর অথবা কলকাতা, যে কোনও জায়গা থেকেই খুব সহজে চম্পকনগরে পৌঁছানো যায়। আসানসোল, দুর্গাপুর থেকে ট্রেনে যেতে হলে, আপনাকে নামতে হবে পানাগড় স্টেশনে। হাওড়া থেকে আসা একাধিক ট্রেন পানাগড় স্টেশনে থামে। সেখান থেকে আপনাকে গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে চম্পকনগর।
তাছাড়াও আপনি বাসে যেতে চাইলে, দু'নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে পানাগড় বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে কসবা যাওয়ার বাস অথবা গাড়ি পেয়ে যাবেন। তবে এই রাস্তায় বাসের সংখ্যা বেশ কম। তাই হাতে সময় নিয়ে আসা ভাল। তাই এবারের পুজোতে (Durga Puja 2021) কাছাকাছি নতুন কোনও জায়গা ঘুরে যেতে চাইলে, গন্তব্যের তালিকায় রাখতে পারেন চম্পকনগর। দেখা করে আসতে পারেন মনসামঙ্গল কাব্যের ইতিহাসের সঙ্গে।
Nayan Ghosh