পেট বড় বালাই, পেটের তাগিদেই দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন জোগাড়ে কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয়। এমনই পরিস্থিতিতে দাঁড়য় যে লটারির দোকানই ভরসা হয় এম এ পাশ তন্ময় চুনারির। মুর্শিদাবাদের নওদা থানার সাকোয়া গ্রামের বাসিন্দা তন্ময় চুনারি। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে ক্লাস সেভেনে পড়তেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয় তন্ময়। তারপর সংসারের হাল ধরতে কখনও সাইকেলের দোকানে আবার কখনও রাজমিস্ত্রীর কাজ করেছে সে। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল বরাবরই, কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিলনা। তারপরেই তন্ময়ের দাদা একটি লটারির দোকান খোলে। একটু রোজগার হতেই ফের পড়াশোনা শুরু করে দেয় তন্ময়।
advertisement
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বি এ, এম এ পাশ করার পর চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে তন্ময়। ইচ্ছা রাজ্য বা কেন্দ্রীয় বাহিনীতে যোগদান করার। সেইমত রাজ্য পুলিশের এস আই কনস্টেবল পরীক্ষা দিয়ে লিখিত ও শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করেও চাকরি মেলেনি। কিন্তু তারপরেই দাদার মৃত্যুর পর সংসারের দায় এসে পড়ে তন্ময়ের উপর। পরিবারে রয়েছে অসুস্থ মা, ভাই, বৌদি, ছোট ভাইপো। এম পাশ করেও কোনও চাকরি না জোটায় অভাবের সংসারে হাল ধরতে তাই লটারির দোকানই ভরসা তন্ময়ের। তবে এখন ও হাল ছাড়েনি তন্ময়। নিজেকে প্রস্তুত রাখতে প্রতিদিন ভোরে মাঠে দৌড়ে শরীরচর্চা করে নেয় সে। দোকানে বসে অবসরে টুকটাক পড়াশোনায় সেরে নেয়।
আরও পড়ুন: সংকটে উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্প! ছয় লক্ষ মানুষ জীবিকা হারাচ্ছেন!
তন্ময় বলেন, খুব কষ্ট করে পড়াশোনা করেছি। আশা ছিল একটা চাকরি পেয়ে যাব। তাহলে আর কোনও চিন্তা থাকত না। কিন্তু পরীক্ষায় পাশ করেও বসে আছি। কোনও চাকরি পেলাম না। সংসার তো চালাতে হবে। তাই লটারির দোকানই আমার ভরসা। তবে মনে খুব দুঃখ নিয়েই দোকানের নামটা রেখেছি 'এম এ পাশ লটারীওয়ালা তন্ময়'। স্থানীয় বাসিন্দা সুজয় বিশ্বাস বলেন, উচ্চ শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও বেকারত্বের জ্বালায় লটারির দোকান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে তনায়। সমাজের কাছে যা অত্যন্ত লজ্জাজনক। উচ্চ শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রশাসনের বিবেচনা করা উচিত। নওদা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। তন্ময়ের সঙ্গে কথা বলে সমস্ত সরকারী সহায়তার চেষ্টা করব তবে আশা রাখছি ও একদিন নিশ্চয় চাকরি পাবে। নওদা ব্লক কংগ্রেসের সভাপতি সুনীল কুমার মন্ডল বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে শুধুই দুর্নীতি কোনও কর্মসংস্থান নেই। একজন এম পাশ ছেলে লটারি বিক্রি করছে যা অত্যন্ত লজ্জাজনক।
Pranab Kumar Banerjee