ইতিমধ্যেই পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রয়েছে অন্ডাল বিমানবন্দর বা কাজী নজরুল বিমানবন্দর। তারপর আরও একটি বিমানবন্দর চালু হতে চলেছে এই জেলা থেকে। যা জেলার বাণিজ্যিক দিক থেকে শুরু করে পরিবহন, সমস্ত বিষয় উন্নত করবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন না, বার্নপুর বিমানবন্দর নতুন নয়। আগেই বিমান ওঠানামা করত বার্নপুর বিমানবন্দরে। তবে সে সময় বাণিজ্যিকভাবে উড়ান হত না। তারপর দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই বিমানবন্দরে উড়ান বন্ধ ছিল। তবে বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের উড়ান প্রকল্পের অধীনে বার্নপুর বাণিজ্যিক ভাবে উড়ান শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। বার্নপুর বিমানবন্দরে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বার্নপুর বিমানবন্দরের রানওয়ে তৈরি এবং এটিসি টাওয়ার তৈরির কাজ।
advertisement
আরও পড়ুন: অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন লিমিটেডের অধীনে প্রচুর নিয়োগ, আজই আবেদন করুন
জানা যায়, বার্নপুরের কালাঝরিয়ায় নিজের ব্যক্তিগত দুটি বিমান ওঠা নামার জন্য একটি বিমানবন্দর তৈরি করেন তদানীন্তন ইসকো কর্ণধার বীরেন্দ্রনাথ মুখার্জী। সত্তরের দশকে তার বিমান ওঠানামা করত বার্নপুর এয়ারপোর্টে। পরে ইসকোর জাতীয়করণ হলে আর বীরেন্দ্রনাথ মুখার্জীর বিমান ওঠানামা করেনি এই বিমানবন্দরে। তখন থেকেই প্রায় অযত্নে পড়েছিল বার্নপুর বিমানবন্দরটি। পাঁচ দশক অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার ফলে বিমানবন্দরের খোলনচে প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে বসেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই বিমানবন্দরটি আবার ঢেলে সাজিয়ে উড়ান চালু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ইসকো কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরটি সম্পূর্ণ চালু করতে প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানা গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে যখন ইসকোর আধুনিকীকরণ হয়, তখন বার্নপুর বিমানবন্দরে নেমেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সেই সময় বিমানবন্দরে কিছুটা মেরামত করা হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে আবার বিমানবন্দরটি পড়েছিল অযত্নে। পরে কেন্দ্রীয় সরকারের উড়ান প্রকল্পের অধীনে বিমানবন্দরটি ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হলে, বিমানবন্দরের রূপ আবার বদলাতে শুরু করে। উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় বিমানবন্দর চত্বর। ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে রানওয়ে। তৈরি হয়েছে এটিসি টাওয়ার। যদিও বিমান বন্দর সংলগ্ন এলাকায় বড় বড় গাছ থাকার জন্য উড়ান চালু করা সম্ভব হয়নি এখনও। তবে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেওয়ার পর কিছু গাছ কাটানো গিয়েছে। তা ছাড়াও এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় ট্রান্সফর্মার রয়েছে, সেগুলিও সরিয়ে ফেলতে চাইছে জেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুন: রেস্তোরাঁয় খেতে গিয়ে মুখ ফাটল মহিলার, কারণ শুনলে চমকে উঠবেন!
অন্যদিকে, অনুমতির জন্য অসামরিক বিমান মন্ত্রকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ডিজিসিএ পরিদর্শনের পর অনুমতি দিলেই এখান থেকে উড়ান শুরু হবে। জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে অন্তর্দেশীয় বিমান পরিষেবা চালু করা হবে বার্নপুর এয়ারপোর্ট থেকে। বার্নপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার বিমান চালু করা হতে পারে বলে খবর। শুরুর দিকে ১৮ সিটের বিমান চালানো হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে এতকিছুর পরও এখন শুধু অপেক্ষা ডিজিসিএ -এর অনুমতি। পাশাপাশি ছোট ছোট সমস্যা মিটিয়ে ফেলা। তার পরেই বাণিজ্যিকভাবে উড়ান শুরু হবে বার্নপুর থেকে। তার জন্যই অপেক্ষায় রয়েছে বার্নপুর বিমানবন্দর। দ্বিতীয় বিমানবন্দর পাওয়ার অপেক্ষায় বসে আছেন জেলার মানুষ। নানান উদ্যোগী পদক্ষেপ করছে জেলা প্রশাসন।
জানা গিয়েছে, বিমানবন্দর চালু হলে সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসা ব্যবস্থা তৈরির দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি বিমানবন্দরের নিরাপত্তা দেবে পুলিশ রাজ্য পুলিশ। রাজ্য পুলিশের কর্মীদের তার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিমানবন্দর চালু হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ দেখে খুশি শিল্পমহল। কারণ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলার একেবারে কাছাকাছি অবস্থিত এই বিমানবন্দর। পাশাপাশি একই জেলায় দুটি বিমানবন্দর থাকার ফলে, আশপাশের জেলাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ আরও সুদৃঢ় হবে। এতে শিল্পক্ষেত্র থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা - সবদিক থেকেই জেলার সার্বিক বিকাশ ঘটাবে।
নয়ন ঘোষ