ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদা ব্লকের বয়রা গ্রাম। স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পরেও রেজাউল মণ্ডল দুই দেশেরই বাসিন্দা। ৭২ বছরের রেজাউল-সহ তাঁর পরিবার তাই সীমান্তের এপার-ওপার মিলিয়ে করেন বসবাস। শুধু তাই নয়, তাঁর ঠিকানাও দু’টি। ভারতের কাছে বাগদা ব্লকের বয়রা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। আবার বাংলাদেশে পরিচিত যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার গদাধরপুরের বাসিন্দা হিসেবেও রয়েছে সাকিন। তবে, দু'পারের সীমান্তরক্ষীদের কাছে অবশ্য এই মণ্ডল পরিবারের পরিচিতি শুধু '৩৯/১১ পিলারের বাসিন্দা' হিসেবে।
advertisement
আরও পড়ুন : শীতকালে আইসক্রিম খাওয়া কি শরীরের পক্ষে ভাল না খারাপ? জানুন বিশেষজ্ঞের মত
দেশভাগের সময়ে বাড়ির উঠোনের মাঝখান দিয়েই চলে গিয়েছে দেশভাগের রেখা। ফলে বসতবাড়ি অর্ধেক পরে যায় ভারতে। বাকি অর্ধেক চলে যায় বাংলাদেশের মধ্যে। কাঁটাতারের বেড়া না থাকলেও, দিনরাত চলে বিএসএফ আর বিজিবি-র করা নজরদারি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্ভ্রান্ত মণ্ডল পরিবারকে দেশভাগের সময় বিষয় সম্পত্তি খোয়াতে হয়। এখন সম্বল বলতে সীমান্তের মধ্যবর্তী এই ১৬ বিঘা জমি। যার সাত বিঘা বাংলাদেশে, আর নয় বিঘা ভারতের মধ্যে। চাষের জমিরও অর্ধেক ভারতে, অর্ধেক বাংলাদেশে। চাষের পর আগে দু'দেশের অনুমতি নিয়ে সাড়ে দশ মন ধান ভারতে নিতে পারতেন। সীমান্তরক্ষীদের অনুমতির সেই কাগজপত্র আজও সযত্নে আগলে রেখেছেন তিনি। কিন্তু বর্তমান নিয়মে বাংলাদেশের ফসল বাংলাদেশের বাজারেই বিক্রি করে দিতে হয়। শুধু তাই নয়, চৌগাছার নয় নম্বর স্বরূপদাহ ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত ট্যাক্স জমা দিতে হয় তাঁকে। ভারতেও কর দিতে হয় তাকে।
আরও পড়ুন : সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিপাকে! বাড়ি থেকে উদ্ধার হল বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ও টিয়াপাখি
উত্তর বয়রা গ্রামে প্রায় ৬০ ঘর বাসিন্দা। সব বাড়িই সীমান্তের পিলার ঘেঁষা। কিন্তু অর্ধেক ভারতে, অর্ধেক বাংলাদেশে এমন বাসিন্দা কেবল মণ্ডল পরিবারই। সংসারও ছড়িয়ে পড়ছে দুই দেশে। রেজাউল মণ্ডল তাঁর মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন যশোরে। এক ছেলে হাফিজুর কাজ করেন কলকাতা পুলিশে। স্বাধীনতার এত বছর অতিক্রান্ত হলেও, দুই দেশেরই বাসিন্দা হিসেবেই রয়ে গেলেন মণ্ডল পরিবার।