কিন্তু কেন এই গাড়ি নিয়ে এত প্রশ্ন? ব্যবসায়ী রাজু বাবুর প্রাণ তখন উড়ে গিয়েছে। সময় কিছুটা গড়িয়েছে। তার মধ্যে জানা গিয়েছে, ওই সাদা এসইউভির মালিকানা রয়েছে জনৈক আব্দুল লতিফের নামে। তা কে এই আব্দুল লতিফ? সূত্রের উৎস খুঁজতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, আব্দুল লতিফ অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ। যাকে হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে সিবিআই। WB ৪৮ডি ৭০৩২ গাড়িটি ব্যবহার করতেন আব্দুল লতিফ। বীরভূমে কান পাতলে শোনা যায়, এই আব্দুল লতিফ অনুব্রত মণ্ডলের যথেষ্ট ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ঘনিষ্ঠ ছিলেন গরু পাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের। তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, এই আব্দুল লতিফ গরু পাচার, বালি পাচার সহ একাধিক বেআইনি কারবারের সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে শোনা যাচ্ছে, সেই আব্দুল লতিফই গাড়ি পাঠিয়েছিলেন ব্যবসায়ী রাজু ঝা-র জন্য। দুবরাজপুর নিবাসী তার বিশ্বস্ত চালককে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়েছিলেন তিনি।
advertisement
এখন প্রশ্ন, কেন বিজেপিতে যোগদানকারী ব্যবসায়ী রাজু ঝায়ের জন্য গাড়ি পাঠাবেন তৃণমূল জেলা সভাপতি ঘনিষ্ঠ? যার জন্য হন্যে হয়ে খোঁজ চালাচ্ছে সিবিআই। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এই খুনের পিছনে রয়েছে বীরভূম যোগ? নাকি ব্যবসায়িক শত্রুতা? না কালো হীরের সাম্রাজ্যের দখলদারিত্ব? অনুব্রত, সাইগল এখন তিহার জেলে। তাদের অনুপস্থিতিতে কি সাম্রাজ্যের রাশ গিয়েছিল এই রাজু ঝায়ের হাতে? - প্রশ্ন উঠছে অনেক। প্রশ্ন উঠছে, আব্দুল লতিফের সঙ্গে কী যোগসূত্র ওই ব্যবসায়ীর? এই খুনের পেছনে আসল কী কারণ রয়েছে?
যদিও বাম আমল থেকে কয়লা ব্যবসায় হাত পাকিয়েছিলেন রাজু ঝা। শিল্পাঞ্চলের যারা বালি, কয়লা সম্পর্কে খবর রাখেন, তাদের মতামত এমনটাই। যদিও তিনি নাকি বর্তমানে হয়ে উঠেছিলেন ব্যবসায়ী। দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে বিশাল একটি বিলাসবহুল হোটেলের মালিকানা নাকি তার নামে। সেই তারা মার্কা হোটেলে যাতায়াত লেগেছিল বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এসেও সেই হোটেলে উঠেছিলেন। যদিও এই বিষয়ে দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘরুই জানিয়েছেন, তিনি বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু দলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ তার ছিল না। তাহলে কি রাজু ঝায়ের দায়ভার ঝেড়ে ফেলতে চাইছে পদ্মশিবির? - এই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর কোটায় ডাক্তারি পড়া, বামেদের বিরুদ্ধে বিরাট দুর্নীতির অভিযোগ তৃণমূলের! বিষয় কী?
শক্তিগড়ের শুট আউটের প্রত্যক্ষদর্শীরা যেমন ভাবে বিবরণ দিচ্ছেন, সেখানেও প্রশ্ন অনেক। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে জানা গিয়েছে, শক্তিগড়ে ল্যাংচার দোকানের সামনে ঝালমুড়ি কিনতে গাড়ি থেকে নেমেছিলেন আব্দুল লতিফের বিশ্বস্ত ওই চালক। তার মধ্যেই নীল রংয়ের একটি গাড়ি এসে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিল ব্যবসায়ী রাজু ঝাকে। ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ঠ ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে গাড়িতে আহত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। তিনি নাকি গাড়িতে শুয়ে পড়েছিলেন গাড়িতে। তার হাতে লেগেছে একটি গুলি। আশপাশের লোকজন ছুটে আসতে আসতে নীল রঙের ওই বালেনো গাড়িটি হওয়া। পুলিশকর্তাদের একাংশের মতামত, এ যেন ঠিক সাজানো নিখুঁত চিত্রনাট্য। যেভাবে গাড়িতে করে এসে ভর সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট দক্ষ হাতের কাজ।
গুলি কাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন বর্ধমানের সুপার কামনাশীষ সেন। তিনি জানিয়েছেন, সবদিক খতিয়ে দেখে পুলিশ তদন্ত করছে। আততায়ীরা খুব শীঘ্র ধরা পড়বে। কিন্তু প্রশ্নের শেষ এখানেই নয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দুর্গাপুরের অম্বুজা কলোনিতে এক ব্যবসায়ীর কার্যালয় লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে দুষ্কৃতীরা। জানা যায়, রাজু ঝাঁ ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর কার্যালয় ছিল সেটি। যখন এই গুলি ছোঁড়া হয়েছিল, তখন সেখানে ছিলেন ওই ব্যবসায়ীর ভাই। যদিও ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গিয়েছেন। শক্তিগড়ের এই ঘটনার সঙ্গে কোন যোগসূত্র রয়েছে সেই গুলিকাণ্ডের? সেটাও বলবে তদন্ত। তবে এখনও পর্যন্ত দুর্গাপুরের সেই গুলি কাণ্ডে কোনও গ্রেফতারি নেই।
আরও পড়ুন: রাতে নিজের বাড়িতেই মারাত্মক কাণ্ড ঘটালেন অনুব্রত মণ্ডলের মেয়ে, ছুটে গেলেন জেলা নেতারা!
আবার শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত জানা গিয়েছ, যে নীল রঙের গাড়িতে করে দুষ্কৃতীরা এসে ব্যবসায়ীর শরীর ঝাঁঝরা করে দিয়েছে, সেই গাড়িটিও নাকি উদ্ধার করা হয়েছে। শক্তিগড় এর কাছেই নীল রঙের একটি গাড়ি পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। সেই গাড়িতে পাওয়া গিয়েছে অনেকগুলি নাম্বার প্লেটও। সব মিলিয়ে ব্যবসায়ী, রাজু ঝাঁয়ের মৃত্যুতে উঠে আসছে অনেক প্রশ্ন। এই খুনের পিছনে যোগসূত্র কি? কি রসায়ন এই খুনের পিছনে? শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর এবং অবৈধ কয়লা সাম্রাজ্যে এই মৃত্যু তুলে দিয়েছে অনেক প্রশ্ন। বিজেপি নেতা তথা ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে সরগরম শিল্পাঞ্চল। মৃত্যুর কারণ খুঁজতে নিজের নিজের মতো করে বিশ্লেষণ চালিয়ে যাচ্ছেন সবাই। যোগসূত্র অনেক। কিন্তু উৎস কোথায়? নজর পুলিশি তদন্তের দিকে।