ইংরেজরা নিয়ম করেছিলেন, সোম থেকে শনি কাজের দিন এবং রবিবার ছুটি। কিন্ত ইংরেজদের চালু করা এই নিয়মের বিরোধিতা করে এবং অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন করে রবিবারের বদলে সোমবার স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই স্কুলের প্রথম পরিচালন সমিতির সভাতেই।
ব্রিটিশদের চরম অত্যাচারের কাছেও মাথা নত করেনি বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলটি। আজও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি সম্মান জানাতে রবিবার স্কুলে বেজে উঠে ঘন্টা ,আসেন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে পড়ুয়ারা,চলে পঠন-পাঠন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে।স্বাধীনতা আন্দোলনে অগ্রগণ্য ভূমিকা নেওয়া নিজেদের স্কুলের জন্য আজও গর্ববোধ করেন স্কুলের বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা।
advertisement
১৯২০ সালের ৪ ঠা সেপ্টেম্বর নাগপুরে কংগ্রেসের এক বিশেষ অধিবেশনে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে প্রস্তাব উপস্থাপন করেন মহাত্মা গান্ধী।সেই থেকে শুরু হয় বিদেশি দ্রব্য বর্জন থেকে ব্রিটিশ মুক্ত সমাজ গড়ে তোলার অঙ্গীকার।ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের সবচেয়ে বড় অহিংস গণ আন্দোলন,অসহযোগ আন্দোলন।
আরও পড়ুন- পিরিয়ডস চলাকালীন যৌন মিলন নিরাপদ? ভুল ধারণা ভাঙুন, জেনে নিন চিকিৎসকের পরামর্শ
অল্প সময়ের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল অসহযোগ আন্দোলন। এরই মাঝে ১৯২২ সালের ৫ ই জানুয়ারি পথচলা শুরু হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ের। ব্রিটিশদের কোনরকম সাহায্য ছাড়াই গড়ে উঠেছিল এই স্কুল। তাই ব্রিটিশদের নিয়মের বিরোধিতা ও গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে সামিল হওয়াই ছিল এই স্কুলের প্রধান লক্ষ্য।রবিবার ছিল ব্রিটিশদের ছুটির দিন আর এই ভাবধারা থেকে মুক্ত হতেই স্কুলে রবিবার শুরু হয় পঠন-পাঠন। এমনকি স্কুলে পড়ানো হতো না ইংরেজিও।
অসহযোগ আন্দোলন প্রতিহত করতে ব্রিটিশদের তরফে শুরু হয় দমন পীড়ন।চরম অত্যাচারের মুখে পড়তে হয় আন্দোলনকারীদের।কিন্তু ব্রিটিশদের সেই চরম অত্যাচারের কাছেও মাথা নত করেনি বাংলার এই প্রত্যন্ত গ্রামের এই স্কুলটি। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানাতে ও তাদের আত্মবলিদানকে স্মরণে রাখতে স্বাধীনতার ৭৯ তম বর্ষ উৎযাপনের সময়ে আজও সেই ধারা বহমান।প্রতি রবিবার আজও স্কুলের ঘন্টা বাজে,প্রার্থণা হয়,চলে পঠন-পাঠন।
এখনও স্কুলের আনাচে-কানাচে কান পাতলে শোনা যায় সেই ইতিহাসের কথা। বর্তমানে ১০৩ বছরে পদার্পন করেছে স্কুল।পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১১০০। স্কুলের সহশিক্ষক সমীর কুমার ঘোষাল জানান,অসহযোগ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই স্কুলে বিপ্লবী ভাবধারা গড়ে তুলতে এবং ব্রিটিশ বিরোধীতায় স্কুলে চরকা কাটা হত,দেশমাতৃকার উপর সমর্পিত নানান গান রচনা ও গাওয়া হত এবং স্বদেশী পণ্য তৈরী করা হত এমনকি সেই সময় স্কুলে ইংরেজি পঠন-পাঠনও বন্ধ রাখা হয়েছিল।
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই বিদ্যালয়। শুধু পড়াশোনা নয়, দেশাত্মবোধ আর আত্মত্যাগের মহান শিক্ষাও এখানকার শিক্ষার্থীরা ধারণ করে আসছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। এখানকার প্রতিটি ছাত্রছাত্রী তাদের স্কুলের এই গৌরবময় ইতিহাসের জন্য গর্বিত এবং এই গর্ব নিয়েই তারা এগিয়ে চলেছে ভবিষ্যতের পথে।