অরণ্যতেশের বয়স তখন মাত্র পাঁচ। হঠাৎই একদিন ধূম জ্বর। কিছুতেই ছাড়ছিল না। অনেক পরীক্ষার পর ধরা পড়ল, ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত অরণ্যতেশ গঙ্গোপাধ্যায়। মাথায় যেন আকাশ ভাঙল। সালটা দুহাজার ষোলো।
দাঁতে-দাঁত চেপে এগারো মাসের লড়াইর সেই শুরু। কলকাতা ভরসা দিল না। পাড়ি দিলেন মুম্বইতে। আশা-আশঙ্কাকে সম্বল করে। পাশে পেয়েছিলেন বোনকে। যিনি মায়ের মত আগলে রেখেছিলেন বড় ছেলেকে। তাঁর জিম্মায় রেখে মুম্বই যাত্রা। অরণ্যতেশকে সারিয়ে তুলেই হবে।
advertisement
এ তো গেল সেরে ওঠার গল্প। আসল চমক এরপরে। চিকিৎসার সময় ওয়ার্ল্ড উইনার্স চিলড্রেন্স গেমসের খবর নজরে আসে। রাশিয়ায় এই গেমসে অংশ নিতে পারে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরাই। ততদিনে সেরে উঠছে অরণ্যতেশ। অসুস্থতার আগে খেলাধুলোর নেশা ছিল। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মাকে নিয়ে মস্কো পাড়ি ছোট্ট অরণ্যতেশের।
কুড়িটি দেশ। ছটি ইভেন্ট। ধকলের কথা ভেবে অ্যাথলেটিক্সে নামেনি। শুটিংয়ে একটুর জন্য ব্রোঞ্জ মিস। কিন্তু টিটি বোর্ডে বাজিমাত। ক্যানসার কে হারানো অরণ্যতেশের গলায় সোনার মেডেল।
ব্লাড ক্যান্সার। কী? জানে না অরণ্যতেশ। শুধু জানে, কতগুলো রাক্ষস শরীরের মধ্যে ঢুকেছিল। সেগুলোকে ডাক্তার আঙ্কেলরা মেরে দিয়েছে। টিটিতে সোনা জিতলেও মন পড়ে সেই বন্দুক-গুলির ঠাঁই ঠাঁইতেই।
এক বছর আগের ছবিটা বদলে গিয়েছে। মৃত্যুকে হারিয়ে অরণ্যতেশ হাঁটছে, খেলছে, ছুটছে। আটের অরণ্যতেশ পৃথিবীর বাগানটা খুঁজে পেয়েছে। স্বর্গকে থোড়াই কেয়ার। শুধু বাবা-মা চান, ছেেল মানুষ হোক। মানুষের মত মানুষ।