লোককথায় জানা যায়, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় এক রাতে দেবীর কাছ থেকে স্বপ্নাদেশ পান। সেই আদেশ মেনে তিনি এই মন্দির নির্মাণের জন্য জমিদান করেন। রাজার উদ্যোগে গ্রামের মানুষ প্রথম কালীমন্দির তৈরি করেন। ছিল খড়ের চাল দেওয়া এক সরল দেবালয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদের দান ও মন্দির উন্নয়ন কমিটির উদ্যোগে সেই সাধারণ মন্দিরই আজ পেয়েছে বর্তমানের স্থায়ী রূপ। তৎকালীন সময়েই বঙ্গোপসাগরের তীর থেকে আনা এক ব্রাহ্মণ পরিবারকে পুজোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত একই বংশের হাতে এই পুজো চলছে। এখানে পুজো শুরু হলে এক মাইলের মধ্যে অন্য কোনও পুজো হয় না। এটা মায়ের আদেশ বলে বিশ্বাস ভক্তদের।
advertisement
প্রাচীন রীতি মেনে শ্যামাপুজোর দিন দেবীর ভোগে আজও পরিবেশিত হয় মটরের ডাল দিয়ে এঁচোড়ের তরকারি, কচুর মুখী ও চিংড়ি মাছের তরকারি, সঙ্গে সাদা ভাত। মায়ের উদ্দেশে নিবেদন করা হয় পাঁঠাবলির কাঁচা মাংসও। আশ্চর্য হলেও সত্যি, এই সময় এঁচোড়ের মরসুম না হলেও প্রতি বছর কোনও না কোনও ভক্ত মায়ের উদ্দেশে ঠিক এঁচোড় নিয়ে আসেন, যেন এক অলৌকিক টানেই আসে সেই অর্ঘ্য।
শ্যামাপুজোর আগের দিন দেবীর মূর্তিতে নতুন করে রঙ করা হয়। তবে ছয় শতাব্দী পেরিয়েও কখনও মূর্তির বড় কোনও সংস্কারের প্রয়োজন পড়েনি। শুধু প্রতিবছর রঙের পরশে দেবীর মুখাবয়বে সামান্য পরিবর্তন আসে। শ্যামার চক্ষুদান হয় সকালে, শিল্পী আঁকেন দেবীর নয়ন, পুরোহিতরা করেন দৃষ্টিদান, তারপর সন্ধ্যায় শুরু হয় পুজো।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
একটি গ্রামের বিশ্বাস, এক রাজাদের দেওয়া প্রথা ও শতাব্দী ছুঁয়ে যাওয়া ঐতিহ্য- সব মিলিয়ে সংগ্রামপুরের কালীমন্দির আজও উত্তর ২৪ পরগনার এক জীবন্ত ইতিহাস। প্রতি বছর আলো-আঁধারির শ্যামারাত্রে এই গ্রামে জেগে ওঠে এক অদ্ভুত দেবভক্তির আবেশ, যেখানে প্রথাই পুজো, বিশ্বাসই ঐতিহ্য।