অনেকে আবার স্বামীর পরিচিত ব্যক্তির হাত ধরেই পালিয়েছেন বলেও জানাচ্ছে পুলিশের বিশেষ সূত্র। তবে এমন পরিস্থিতিতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারাসত পুলিশ জেলার এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্ক গৃহবধূ নিখোঁজ হলে আইনি দিক থেকে তেমন কিছু করার থাকে না। অনেকক্ষেত্রেই পুলিশ উদ্ধার করতে গেলেও, তাঁরা নিজেরাই জানিয়ে দিচ্ছেন, ফিরে যেতে চান না পুরোনো সংসারে।
advertisement
পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বারাসত পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানায় মোট ৫৩৬ যুবতী, মহিলার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ৫০০ জনই বিবাহিত। শুধু গৃহবধূই নয়, জেলায় নিখোঁজ হয়েছেন ১৯৯ নাবালিকা এবং ৩৩ নাবালক। তাদের মধ্যে যথাক্রমে ১৭০ ও ২৫ জনকে উদ্ধার করাও সম্ভব হয়েছে।
কী কারণে সংসার ছাড়ার এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন গৃহবধূরা? বিশিষ্ট মনোবিদ রিয়া রায় জানান, এই ঘটনার পেছনে রয়েছে একাকীত্ব, সাংসারিক অশান্তি এবং দাম্পত্যে ফাটল। অনেকেই শিকার হচ্ছেন হিংসার। দমবন্ধ হয়ে আসা সেই পরিবেশ থেকে বাঁচার পথ খুঁজতে গিয়েই জড়িয়ে পড়ছেন অন্য সম্পর্কে। শুধু তাই নয়, শারীরিক সম্পর্কের বিষয়টিও রয়েছে। আর সে ক্ষেত্রে বিশেষ সাহায্য করছে মোবাইলে, সোশ্যাল মিডিয়া। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের নানা রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে, ঘর ভাঙছে পরপুরুষরা, প্রেমের প্রতিশ্রুতি-সহ নানা প্রলোভনে পা দিয়েই সংসার ত্যাগ করছেন গৃহবধূরা। যা সমাজের একটি গভীর বিপজ্জনক মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কর্মসূত্রে দূরে থাকা স্বামী, বা সাংসারিক একঘেয়েমি অশান্তির সম্মুখীন হওয়া পরিবারে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। অনেক স্বামী পুলিশের কাছে বউ চলে যাওয়ার অভিযোগ জানাতে এসে, নিজেদের নাম যাতে প্রকাশ্যে না আসে তারও অনুরোধ জানাচ্ছেন। তবে জেলা পুলিশের তরফ থেকে নাবালিকাদের বিয়ে-সহ এই ধরনের প্রবণতা আটকাতে আগে থেকেই সচেতনতা প্রচার চালান হয় এলাকার বিভিন্ন স্কুলগুলিতে। এমন পরিস্থিতিতে বারাসত পুলিশ জেলার এই পরিসংখ্যান সমাজের কাছে যেন এক বড় প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে। সাংসারিক সম্পর্কের ভিত কী তাহলে সত্যিই এতটা দুর্বল হয়ে পড়ছে? তবে এই পরিসংখ্যান সামনে আসার পর কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা বেড়েছে স্বামীদের।
Rudra Narayan Roy