এই কালিপুজোর প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রামজীবন রায়। আজ থেকে প্রায় চারশো বছর আগে। তাঁর রাজত্বকালে একটা রাজবাড়িতে একটিই কালিপুজো হত। সারা রাজবাড়ি আলোয় ঝলমল করত,সমস্ত ধর্মের মানুষ নিমন্ত্রিত থাকত রাজবাড়িতে। আর কয়েকটি রাত শেষ হলেই শুরু হবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হবে কয়েক শতাব্দী প্রাচীন খড়গ্রাম ব্লকের এড়োয়ালী গ্রামে। জাতী ধর্ম নির্বিশেষে সবাই আনন্দে মেতে উঠবে এই উৎসবে এযেন এক মিলন মেল।
advertisement
আরও পড়ুন: জাতীয় সড়কের পাশে ফলিয়েছেন ৩ মণ ধান! ভবঘুরের মহিলার কীর্তিতে হইহই কাণ্ড
এক পরিবারে সদস্য জানান, কথিত আছে, বাংলায় বর্গী হানা তখন একটা নিয়মে দাঁড়িয়ে ছিল। রাজা রামজীবন রায় ছিলেন বীরভূম জেলার অন্তর্গত ঢেকা লোকপাড়ার রাজা । এড়োয়ালী তখন বীরভূম জেলায় , বর্গী হানা থেকে প্রজাদের রক্ষা করতে তিনি চলে এলেন এড়োয়ালী গ্ৰামে , তখন মকদম হাজি আলী নামে এক জমিদার রাজাকে পাকাপাকি ভাবেই থেকে যেতে বলেন, সেই সময় ও বা তার আগে থেকেই ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে মা কালির পুজো করে যেত। ডাকাতদের পুজিত যে ডাকাত কালি নাম ছিল, রাজা এসে সেই কালি মূর্তিটার প্রথম পুজো শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ধনতেরসে সোনা কিনবেন! জানেন কি কোন গয়নায় কী সোনা ব্যবহার হয়
আজ তাকেই ধর্ম বুড়ি নামে বলে পুজিত হন। রাজা রামজীবন-ও ছিলেন প্রজাবৎসল।প্রজাদের মঙ্গল কামনায় তিনি ছাগ,মেষ ও মহিষ বলি দিতেন। কিন্তু কালের নিয়মে ভাগ হয়েছে রাজবংশ,বেড়েছে কালীর সংখ্যা। প্রথমে এই রাজপরিবার ‘রায় রাজপরিবার’ নামে পরিচিত থাকলেও রাজা রামজীবন রায় এর বংশধরেরা বিভিন্ন প্রজাবৎসল কাজ করবার জন্য ব্রিটিশদের থেকে ‘চৌধুরী’ উপাধি লাভ করেন, সেই থেকেই এই রাজপরিবার ‘রায়চৌধুরী রাজপরিবার’ নামে পরিচত।
রাজা রামজীবন এর তিনটি প্রপৌত্র ছিল-রাজা দেবদত্ত রায়চৌধুরী, রাজা ইন্দ্রমণি রায়চৌধুরী এবং রাজা শ্যামসুন্দর রায়চৌধুরী, এদের রাজবংশ যথাক্রমে বড়পাঁচআনি,ছোটো পাঁচানি এবং ছয়ানি রাজপরিবার নামে পরিচিত।বড়পাঁচানিতে পাঁচটি কালী-ধর্ম/ষষ্ঠী,বেল,কুল,টুংগী এবং শ্যামরুপী। ছয়ানি রাজপরিবারের চারটি কালী- বড়মা,মঠ,নিম ও চাতর বুড়ি। ছোটোপাঁচানি রাজপরিবারে চারটি কালী-ধর্ম/ষষ্ঠী,মোল,আমড়া এবং বেল(এই বেল কালীটিতে শুধু ঘট পুজো করা হয়)।এখানে ধর্মকালী ও ষষ্ঠীকালীকে বড়পাঁচানি ও ছোটোপাঁচানি রাজপরিবার পালা করে চালায়। বেশিরভাগ কালীকেই ‘বুড়ি’ বলেই ডাকা হয়। এই গ্রামে কালীপুজোতে মেতে ওঠেন একরাত্রে সকলেই।
কৌশিক অধিকারী