বাংলা গানের থেকেও জনপ্রিয় হিন্দি গানের দাপট সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজবংশীদের নিজস্ব 'রাজধারী মুখোশ নৃত্য' বা 'লঙ্কা গান'-এর ক্ষেত্রে। এই জনজাতি সম্প্রদায়ের তরুণ প্রজন্ম নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে ক্রমশ মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।
মাটিগাড়া, শিলিগুড়ি, বিহারের ঠাকুরগঞ্জ, নেপালে বসবাসরত রাজবংশীদের মধ্যে এই পালা গান একসময় খুব জনপ্রিয় ছিল। উত্তরবঙ্গের তরাই অঞ্চলের খড়িবাড়ি ওয়ারিশ জোত বস্তির রাজবংশীরা আজও ১০০ বছরের পুরনো এই পালায় মেতে ওঠেন। তবে তা মূলত প্রবীণদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই পালারই অন্যতম বড় আকর্ষণ 'রাজধারী মুখোশ নৃত্য' বা 'লঙ্কা গান'৷ জানা যায়, এই 'লঙ্কা গান' আগে চলত সারা রাত ধরে টানা সাতদিন চলত। কিন্তু নতুন প্রজন্মের আগ্রহের অভাবে সেই সময় কমতে কমতে তা এখন চারদিনে এসে দাঁড়িয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: হরিদ্বারে নয়, বাংলার এই ঘাটে প্রথম হয়েছিল কুম্ভ স্নান! জেনে নিন কোথায়
১৯২৫ সালে খড়িবাড়ির ওয়ারিশ জোত বস্তিতে এই পালা গান শুরু করেন চৌরঙ্গী ঠাকুর রাজধারী। কিন্তু বর্তমানে সঠিক প্রশিক্ষণ ও অর্থের অভাবে এই সুপ্রাচীন পালা গান ও নৃত্যকলা হারিয়ে যাওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে। এই পরিস্থিতে রাজবংশী সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্রিয় হয়েছে সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, সংগীত ও দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমি; পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্র; ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের সহযোগিতায় দার্জিলিং জেলার মহিষমারীতে ১০ দিনের এক প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছে। এখানে রাজধারী মুখোশ নৃত্যে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। রাজবংশী সমাজের বিভিন্ন পৌরাণিক চরিত্র রাবন, মহিরাবান, বিভীষণ, সুর্পনখা, ত্রিশুলা রাক্ষসী, বালি, সুগ্রীব , অঙ্গত, হনুমান, গোরল কালি, বাঘ , ধাইকুকজি, বুড়ি, বেকা সিপাই, বারিয়ান ধীর, জামুবান এই সকল চরিত্রের মুখোশ তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য, নাটক ও সঙ্গীত এবং দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমির সচিব হৈমন্তী চট্টোপাধ্যায় এই শিবির নিয়ে বলেন, "আমরা ১৯৫৫ সাল থেকেই এই ওয়ার্কশপগুলো করে আসছি। হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক উপাদানগুলিকে পুনরুজ্জীবিত এবং একত্রিত করে প্রিন্ট এবং ডিজিটাল মাধ্যমে ডকুমেন্টেশন করে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য। যাতে ভাবী প্রজন্ম এগুলোর কথা জানতে পারে।"
অনির্বাণ রায়