আপনি কি লক্ষ্য করেছেন, এ বছর এত অবিরাম বৃষ্টি কেন হচ্ছে? আকাশে এমন কী ঘটছে? এই বছর মে মাসে বৃষ্টি ১২৫ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে। অর্থাৎ, শেষবার ১৯০০ সালে ভারতে এমন বৃষ্টি দেখা গিয়েছিল। দেশের ৯৫% এলাকায় বৃষ্টি স্বাভাবিকের থেকে বেশি হয়েছে, মানে যেখানে বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
advertisement
এই বছর এত বৃষ্টি হয়েছে যে গঙ্গার মতো ৭-৮টি নদীও বানানো যাবে। ভারতের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী গঙ্গা যা পাঁচটি রাজ্য পার করে, তার সমান জলের পরিমাণ বৃষ্টি এই মরসুমে ভারতের মাটিতে পড়েছে। এই বছর অগাস্ট মাসে মুম্বই শহরে এত বৃষ্টি হয়েছে যে, প্রায় তিন বছরের জন্য পুরো শহরের পানীয় জল সরবরাহ করা যেতে পারে। অর্থাৎ মুম্বইয়ে এই মরসুমে এত জল পড়েছে যে প্রায় ২ কোটি মানুষের জন্য সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত পানীয় জল নিশ্চিত করা সম্ভব।
এই বছর দিল্লিতে ১৫ অগাস্টের পর থেকে একটানা বৃষ্টি চলছে। এছাড়া গত ৭৫ দিন ধরে দেশের কোনও না কোনও অংশে প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। ২০২৫ সালের বৃষ্টি সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। ফলে সমতল থেকে পাহাড়ি অঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞ দেখা যাচ্ছে।
জম্মু-কাশ্মীরে বৃষ্টির ১০০ বছরের রেকর্ড ভেঙে গেছে। শেষবার ১৯২৪ সালে এমন বিপর্যয় হয়েছিল সেখানে। হিমাচলেও বৃষ্টির প্রভাব এতটাই ভয়াবহ যে ৬৭৫টি সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে। দুই রাজ্যে মেঘ ফাটা বৃষ্টি এবং ভূমিধ্বস যেন সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে।
হিমাচল প্রদেশে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। কুল্লু এবং মনালি অঞ্চলে বেয়াস নদী উত্তাল। গত ২৪ ঘণ্টায় বেয়াস নদীর তীরে থাকা ১৬টি বিল্ডিং ভেসে গেছে। ৬টি সেতু ভেঙে গেছে। হিমাচল প্রদেশের বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, এই পর্যটন স্পট-এর বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে বহু বছর লেগে যাবে। চণ্ডীগড়-মনালি হাইওয়ের একটি বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উত্তর ভারতের প্রায় সব রাজ্যই প্রকৃতির ক্ষোভ দেখছে। কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন, ২০২৫ সালের মরসুমী বৃষ্টি এত বিপজ্জনক কেন? আসলে জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় কারণ।
আরও পড়ুন- ১০৩ কেজির বিশাল লাড্ডু ! গণেশ চতুর্থীতে নজরকাড়া আয়োজন জলপাইগুড়িতে
গত কয়েক বছরে আরব সাগর এবং ভারত মহাসাগরের তাপমাত্রা ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। সাগরের তাপমাত্রা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে, যে কারণে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেড়ে গেছে। এই কারণে যখন বৃষ্টি হচ্ছে, তা আরও তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ছে। সাগরের তাপমাত্রা যখন বেশি থাকে, তখন মেঘ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি আরও বেশি গতি পায়, যা বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে।