কলকাতা: দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজার পর এবার কালীপুজো। আর কালীপুজো মানেই বাঙালির কাছে অন্য এক আবেগ। আলোর উৎসব। তাই এই সময় বাজি না পোড়ালে হয়! আর বাজি মানে বাঙালির জীবনে জড়িয়ে বুড়িমা।
advertisement
কালীপুজোর রাতে বাচ্চা-বুড়ো, সকলেই বাজি পোড়ানোর আনন্দ উপভোগ করে। আর বাজির কথা উঠলেই সবার আগে আসে একটাই নাম, বুড়িমা! বাজির বাজারে বুড়িমা নামটা জানেন না এমন কেউ নেই। আর বুড়িমার বাজির জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আলাদা করে কিছু বলার দরকার নেই। কিন্তু জানেন কি, এই বুড়িমা-র বাজির নামকরণের পিছনে রয়েছে একটা না জানা গল্প!
এখন শব্দ বাজি নিষিদ্ধ। তবে একটা সময় দেদার ফাটানো যেত চকোলেট বোম, কালিপটকা, দোদোমা। আর এই শব্দবাজিতে বাজার কাঁপিয়েছিল বুড়িমা ব্র্যান্ড। একটা সময় কালীপুজোর রাতে বুড়িমার চকোলেট বোম, তারাবাতি-সহ বিভিন্ন বাজি ছিল সবার ফেভারিট।
বুড়িমা-র আসল নাম অন্নপূর্ণা দাস। লোকে তাঁকে বুড়িমা নামেই চেনেন। তাঁর আদি বাড়ি বাংলাদেশের ফরিদপুরে। ১৯৪৮ সালে দেশভাগের পর স্বামী সন্তান নিয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলার ধলদিঘির সরকারি ক্যাম্পে আশ্রয় নেন বুড়িমা।
তাঁর স্বামী সুরেন্দ্রনাথ দাসের যখন মৃত্যু হয়, তখন ছেলেমেয়েরা ছোট। কখনও শাক-সবজি বিক্রি করেছেন। কখনও ঘটি-বাটি বিক্রি করেও সংসার চালাতে হয়েছে তাঁকে। এর পর ধলদিঘি থেকে গঙ্গারামপুরে চলে যান বুড়িমা। সেখানে গিয়ে বিড়ি বাঁধা শিখলেন। সনাতন মন্ডল নামের কজন তাঁকে এই কাজ শেখান। ছোট একটি বিড়ি বাঁধার কারখানা গড়ে তুললেন তিনি।
বুড়িমার মেয়ের বিয়ে হয় হুগলি জেলার বেলুড়ে। মেয়ে-জামাইয়ের কাছে আসতেন তিনি। এখানে আলতা-সিঁদুর বানানোর কাজ শেখেন। তার পর অন্নপূর্ণা আলতা-সিঁদুর ব্র্যান্ড তৈরি হল। এক বছর কালীপুজোর সময় ঠিক করলেন যে বাজির ব্যবসা করবেন। সেই মতো দোকান সাজালেন। অনুমতি ছিল না, তাই দোকান ভেঙে দেয় পুলিশ। আবার লড়াই শুরু বুড়িমার।
আরও পড়ুন- রাজুদার পকেট পরোটা খাবেন মেসি! কলকাতায় এসে ‘আনলিমিটেড তরকারি’ চেখে দেখবেন
এর পর বুড়িমা অনুমতি জোগাড় করলেন। কিন্তু দেখলেন, কিনে বাজি বিক্রি করলে খরচ বেশি। নিজেই বানানো শুরু করবেন বলে ঠিক করেন। বাঁকুড়ার আকবর আলির কাছে বাজি বানানো শেখেন। তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
১৯৯৫ সালে প্রয়াত হন বুড়িমা। তার নাতিরা এই ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যান। এখন বাজার ছেয়েছে অনেক ব্র্যান্ডে। তবুও বুড়িমার জায়গা কেউ কেড়ে নিতে পারেনি।