ভারতীয় মানচিত্রের দিকে ভাল করে তাকালেই নজরে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরের একটি সরু ভূখণ্ড, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে যুক্ত রাখে। এই পথটি পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি শহরের পাশ দিয়ে গিয়েছে বলেই এর নাম শিলিগুড়ি করিডর।
এটি বাংলার মাটি হলেও এই ভূখণ্ডেই নির্ভর করছে ভারতের আটটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা। ফলে বাংলার এই ভূখণ্ড কেবল ভৌগলিকভাবে নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও এক অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে চলেছে।
advertisement
কিছুদিন আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান মহম্মদ ইউনুসের চিন সফরে গিয়ে দেওয়া এক মন্তব্যের পর ফের আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে এই করিডর। এই সরু ভূখণ্ডটি কৌশলগত দিক থেকে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে দেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা একে ডাকেন ‘চিকেনস নেক’ নামে।
কেন এই অংশটি গুরুত্বপূর্ণ, জানেন কি? শিলিগুড়ি করিডর হল ভারতের একটি সরু ভূখণ্ড যা পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। এটি দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম ও ত্রিপুরা — এই আটটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যকে সংযুক্ত রাখে। ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চলটি এতটাই সরু যে সবচেয়ে সরু স্থানে এর প্রস্থ মাত্র ২২ কিলোমিটার। এই সরু গঠনই একে ‘চিকেন নেক’ নামে পরিচিত করেছে।
এটি হিমালয়ের পাদদেশে বিস্তৃত একটি এলাকা। প্রায় ৬০ কিলোমিটার লম্বা ও ২১ কিলোমিটার চওড়া এই করিডর একদিকে ভারতকে বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে সীমান্ত ভাগাভাগি করতে সাহায্য করে, অন্যদিকে এটি চিন ও ভুটানের সঙ্গেও ভৌগলিকভাবে কাছাকাছি।
আরও পড়ুন- আসছে পদ্মার ইলিশ! পুজোর আগে এখানে মিনিমাম দাম কত হবে বাংলাদেশের ইলিশের? জেনে নিন
যদি কোনওভাবে এই করিডর অবরুদ্ধ হয়ে যায়, তবে দেশের মূল ভূখণ্ড ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া এই অঞ্চলের পাশেই রয়েছে চিনের তিব্বতের চুম্বি ভ্যালি, সিকিম ও ভুটানের ডোকলাম ট্রাই-জাঙ্কশন। সেই কারণেই কৌশলগতভাবে এই করিডরের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই করিডরের মধ্য দিয়েই গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক ও রেলপথ উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাকি ভারতের সঙ্গে যুক্ত করে। ভারতীয় সেনার ক্ষেত্রেও এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সেনা সরবরাহ ও মোতায়েনের জন্য এই রাস্তাই ভরসা। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই এর বিকল্প পথ তৈরির উপর কাজ শুরু করেছে।
বিকল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট প্রোজেক্ট নিয়ে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কলকাতা বন্দর থেকে মায়ানমারের সিত্তে বন্দর হয়ে কালাদান নদী পেরিয়ে সড়কপথে মিজোরাম পর্যন্ত যাওয়া যাবে। এই পথে জল, নদী ও সড়ক—সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যবহার হবে।