জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসী হানায় যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দেশের এক বীর জওয়ান। নাম তাঁর বিনয় নারওয়াল। তাঁর স্ত্রীর নাম হিমাংশি। সন্ত্রাসী হানার মাত্র ৬ দিন আগে তাঁদের বিয়ে হয়েছে, বিয়ের প্রীতিভোজ অনুষ্ঠিত হয়েছে ২ দিন আগে। সম্প্রতি তাঁরা ছিলেন কাশ্মীরে। সেখানেই সন্ত্রাসবাদীর গুলিতে বিনয়ের মৃত্যু হয়েছে।
advertisement
বুধবার স্বামীর কফিনবন্দি দেহের সামনে কিছু ক্ষণ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন নববিবাহিতা স্ত্রী। চোখে একরাশ শূন্যতা। খানিক পরেই নিস্তব্ধতা ভেঙে খানখান। কফিনবন্দি দেহ আঁকড়ে বিলাপ করে উঠলেন তরুণী। বলতে থাকেন, ‘‘তুমি ভাল থেকো। তুমি আমাদের গর্ব।’’ তার পর বাঁধ ভাঙল কান্নার!
বিনয় হরিয়ানার করনাল শহরের সেক্টর ৭-এর বাসিন্দা ছিলেন। দুই বছর আগে তিনি ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৬ এপ্রিল রিসেপশনের পর তাঁরা ২১ এপ্রিল মধুচন্দ্রিমার জন্য কাশ্মীরে যান। ঘটনার পর থেকে তাঁর বাড়িতে নেমে এসেছে নীরবতা, পরিবারের কিছু সদস্য শ্রীনগর চলে গিয়েছেন। ২৬ বছর বয়সী বিনয় বর্তমানে কোচিতে পোস্টেড ছিলেন। তাঁর বুক, ঘাড় এবং বাঁ হাতে সন্ত্রাসবাদীরা গুলি করে, ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর প্রকাশ্যে আসার পর মধ্যরাতেও সংবাদমাধ্যম বিনয়ের বাড়িতে পৌঁছেছিল। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কারও সঙ্গে কোনও কথা বলা হয়নি।
অন্য দিকে, পহেলগাঁওয়ের এই ঘটনার পর বিনয়ের স্ত্রী হিমাংশির একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিওয় হিমাংশি জানিয়েছেন যে বিনয় ভেলপুরি খাচ্ছিলেন। এই সময়ে সন্ত্রাসবাদীরা বুঝতে পারে যে তিনি মুসলিম নন, এর পরেই তাঁকে গুলি করে। বিনয়ের গ্রাম ভুসলির প্রধান সুরেন্দ্র কুমারও এই বিষয়ে তাঁর সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন, ‘‘আমাদের গ্রামের ছেলেটি নৌবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত ছিল। সন্ধ্যার দিকে খবর পাওয়া যায় যে, সন্ত্রাসী হামলায় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বিনয়ের বিয়ে হয় গত ১৬ এপ্রিল। গ্রামে শোকের পরিবেশ বিরাজ করছে।’’
পহেলগাঁওয়ের এই সন্ত্রাসী হামলায় এখনও পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। তাঁদের বেশিরভাগই পর্যটক। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পহেলগাঁওতে সন্ত্রাসবাদীরা গুলি চালায়। জানা গিয়েছে যে তারা ধর্ম জিজ্ঞাসা করে মানুষকে টার্গেট করেছিল। অন্য দিকে, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সাইনি বলেছেন, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরে আমাদের পর্যটকদের উপরে কাপুরুষোচিত এবং পরিকল্পিত আক্রমণ দুর্ভাগ্যজনক। এর যতই নিন্দা করা হোক না কেন… এই শোকের মুহূর্তে যাঁরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছেন, তাঁদের পাশে সরকার দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি বিদেহী আত্মাদের তাঁর চরণে স্থান দেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দেন। যারা এই কাপুরুষোচিত কাজটি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’