ঠিক কী হয়েছিল? উত্তর প্রদেশের পিএসি জওয়ানদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই অসন্তোষ দানা বাঁধছিল। তাই চরমে পৌঁছয় কুম্ভ মেলায় ডিউটির কথা শুনে। জওয়ানরা খোলাখুলি জানিয়ে দেন, তাঁরা কুম্ভে ডিউটি করবেন না। উর্ধ্বতন অফিসাররা সে সব শুনতে নারাজ।
advertisement
ব্যস, আগুনে যেন ঘি পড়ল। ক্ষুব্ধ পিএসি জওয়ানরা মাঠে নেমে পড়লেন। মেরঠ থেকে তিনটি ব্যাটেলিয়ান বিদ্রোহ ঘোষণা করল। সরকারের কোনও নির্দেশ আর তাঁরা মানবেন না। বরেলি, আগ্রার জওয়ানরাও যোগ দিলেন। দেখতে দেখতে বিদ্রোহের আগুন পৌঁছে গেল লখনউ পর্যন্ত।
পিএসি জওয়ানদের দাবি ছিল মূলত তিনটি। বেতন বৃদ্ধি, উন্নত পরিস্থিতি এবং স্বীকৃতি। সদা শৃঙ্খলাপরায়ন জওয়ানরা এই তিন দাবিকে সামনে রেখে এতটাই বেপরোয়া হয়ে উঠল যে সামনে যা পেল তাই পুড়িয়ে দিল। থানা, সরকারি অফিস, সরকারি সম্পত্তি কিছুই বাদ গেল না। লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রনেতাও পরিস্থিতির ফায়দা তুলতে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন। অবস্থা আরও খারাপ হল।
সেই সময় লখনউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস যেন যুদ্ধক্ষেত্রে হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে আগুন লাগিয়ে দেন বিদ্রোহীরা। জায়গায় জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে চলে সংঘর্ষ। শত চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয় উত্তর প্রদেশ পুলিশ। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার হস্তক্ষেপ করে। উত্তর প্রদেশে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরিস্থিতি সামলাতে তৎকালীন বিএসএফের মহাপরিচারক কেএফ রুস্তমজিক দায়িত্ব দেয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। সেই সময় তাঁর হাতে মাত্র দুটি ব্যাটেলিয়ন ছিল। তিনি জানান, সীমান্ত থেকে অন্তত ২০টি ব্যাটেলিয়ান আনতে হবে। কিন্তু এত সময় নেই। তখন ভারতীয় সেনাকে পরিস্থিতি সামলানোর নির্দেশ দেয় কেন্দ্র।
পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যায়। সেনার গুলিতে কয়েকজন বিদ্রোহীর মৃত্যু হয়। আরও ক্ষেপে ওঠে পিএসি জওয়ানরা। শেষে সেনাকে গুলি না চালানোর নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। এর মধ্যে বিএসএফের ব্যাটেলিয়ান উত্তর প্রদেশে পৌছতে শুরু করে। বিভিন্ন জায়গায় পিএসি জওয়ানদের ঘিরে ফেলে তারা। শেষে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন বিদ্রোহীরা।
বিএসএফ, ভারতীয় সেনা এবং পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কয়েকদিনের মধ্যে সমস্ত পিএসি জওয়ানই আত্মসমর্পণ করেন। এই অভিযানে বিএসএফের লেফটেন্যান্ট কর্নেল আর পি বসির বিশেষ প্রশংসা করা হয়। তাঁর কৌশলেই সহিংসতা ছাড়া বিদ্রোহ দমন করে সরকার।