বয়স্ক নাগরিকের সংখ্যায় সারা বিশ্বে প্রথম সারির দেশ ইতালি। ২০১৭ সালে মানুষের দীর্ঘ জীবন সম্পর্কে এক গবেষণায় সে দেশের এক প্রত্যন্ত গ্রামের প্রায় ৯০ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল। এঁরা সকলেই নবতিপর। দেখা যায় প্রায় সকলের মধ্যেই কাজ করে একটা জেদ আর ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য বাসনা। ‘ইন্টারন্যাশনাল সাইকোজেরিয়াট্রিক্স’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় ২৯ জন বয়স্ক গ্রামবাসীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এঁদের সকলেরই বয়স ৯০ থেকে ১০১ বছরের মধ্যে। ইতালির ওই গ্রামটি সারা বিশ্বে নবতিপর মানুষের আবাস বলেই পরিচিত।
advertisement
আরও পড়ুন-হাঙর কামড়ে ধরেছিল পা, রীতিমতো রুদ্ধশ্বাস লড়াই করে প্রাণে বাঁচল সাহসী বালক!
গবেষণায় দেখা যায়, ৯০-১০০ বছর বয়সী মানুষেরা জীবন এবং পরিবেশের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। বিপত্নীক এক বৃদ্ধের দাবি, স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি ছেলেদের জন্যই ভাল রয়েছেন। ওই গ্রামের প্রবীণরা বিশ্বাস করেন পরিবর্তনের ফলেই জীবন এগিয়ে চলেছে।
•কঠিন সময় আমাদের বয়সকে প্রভাবিত করে
গবেষণায় উল্লেখ রয়েছে এমা মুরানো নামে এক মহিলার, যিনি সে সময় বিশ্বের প্রবীণতমা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৭ সালেই তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯৩৮ সালে এমা তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তটি নিয়েছিলেন— বিবাহ বিচ্ছেদ। গবেষকরা মনে করেন কঠিন সিদ্ধান্ত মানুষের মন ও শরীরের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
এমা দাবি করেছিলেন, বিবাহ বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারাই তাঁর দীর্ঘ আয়ুর রহস্য। সাক্ষাৎকারে এমা জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি চাইনি কেউ আমাকে শাসন করুক।’’ তবে খাদ্যাভ্যাসও একটা কারণ হতে পারে। এমা প্রতিদিন দু’টি কাঁচা ডিম এবং প্রচুর কুকিজ খেতেন। এমা না কি তাঁর বালিশের নীচে কুকি লুকিয়ে রাখতেন!
•ইতিবাচকতা, নীতি এবং অন্যান্য গুণাবলী
জীবনের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলা মানুষের জীবন দীর্ঘ ও সুস্থ হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা। তার বাইরে কঠোর কাজের নীতি, পরিবার, দেশ এবং ধর্মের সঙ্গে দৃঢ় বন্ধন ইত্যাদিও প্রভাব বিস্তার করে। গবেষকদের দাবি, এ সব কাজ করার মধ্যে দিয়ে জীবনে একটা উদ্দেশ্য খুঁজে পান বয়স্করা।
আরও পড়ুন-সব উপকরণ দিয়ে এক ক্লিকেই তৈরি করা যাবে রুটি, বিশেষ যন্ত্রের দাম শুনে চোখ কপালে নেটিজেনদের!
•মানসিক সুস্বাস্থ্য
গবেষণায় নবতিপরদের সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয় তাঁদের থেকে ছোট (৫১ থেকে ৭৫ বছর) ব্যক্তিদের শরীর স্বাস্থ্যের দিকটি। শরীর খারাপ হলেও মনের দিক থেকে তরতাজা ছিলেন নবতিপর মানুষেরা। তাঁদের আত্মবিশ্বাস এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
•কম সময়ে সন্তুষ্টি এবং সুখ
আসলে বয়স যত কম থাকে, ততই নানা বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলতে থাকে। ৯০ পেরোনো মানুষগুলির মধ্যে আর কোনও বিষন্নতাই ছিল না বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা খুব অল্প কিছুতেই সুখী হয়ে যান। আর সেটাই হয়ে ওঠে তাঁদের ভাল থাকার মূল মন্ত্র।
তবে এটা সত্যি যে, এই বয়সে পৌঁছানোর কোন নির্দিষ্ট সূত্র নেই। রয়েছে কিছু গুণ, যা প্রতিটি বয়সে আমাদের কোনও না কোনওভাবে সাহায্য করে। ইতিবাচকতা এবং ইচ্ছাশক্তি এমন একটি গুণ যা সব বয়সেই কার্যকর।