কুশীনগর: বিয়ের সমস্ত প্রস্তুতি ছিল সারা। সারা পাড়ায় গুঞ্জরিত হচ্ছিল বিয়ের সানাইয়ের সুর। কিন্তু আচমকাই রহস্যজনক ভাবে বাড়ি থেকে উধাও হয়ে গেলেন কনে। ফলে উত্তর প্রদেশের কুশীনগরের খাড্ডা থানা এলাকার এই ঘটনায় ছড়িয়ে পড়েছে চাঞ্চল্য। বিয়েবাড়িতে যেন নেমে এসেছে বিষাদের সুর।
পুলিশ সূত্রের খবর, নেবুয়া নৌরঙ্গিয়া থানা এলাকার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে প্রায় ৫ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন ওই হবু কনে পুষ্পা। তাঁরা দুজনেই বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরিবার সেই সম্পর্ক মানতে চায়নি। তা সত্ত্বেও মুকেশ এবং পুষ্পার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক বাঁধ মানেনি। অবশেষে তাঁদের প্রেমের সামনে ঝুঁকতে হয়েছে উভয় পরিবারকেই। দুই পরিবারই বিয়েতে সম্মতি দিয়েছে। সেই মতো আগামী ৬ মার্চ বিয়ের দিনক্ষণ স্থির হয়েছিল। সমস্ত আয়োজন সারা ছিল। কিন্তু মুকেশ আর পুষ্পার বিয়েতে বাধা কাটার যেন নামই নেই।
advertisement
আসলে বরযাত্রী যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মুকেশ। এরপর পুষ্পার নম্বর থেকে তাঁর ফোনে একটি হোয়াটসঅ্যাপ আসে। যা দেখে রীতিমতো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কিন্তু কী লেখা ছিল ওই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে। সেখানে লেখা ছিল, পরের জন্মে আমাদের আবার দেখা হবে। পুষ্পা উধাও হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে খাড্ডা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন মুকেশের মা। হবু পুত্রবধূকে খুঁজে দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন তিনি।
যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে জানা গিয়েছে যে, মুকেশ দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। নাসিকের একটি আসবাবপত্রের কারখানায় কাজ করতেন। বাবা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ার পর পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব মুকেশই সামলাচ্ছিলেন। ছোট দুই ভাই এবং এক বোন রয়েছে তাঁর। বোনের বিয়ে ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে। এবার মুকেশের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ৫ বছর ধরে পুষ্পার সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক। পরিবারের সম্মতি নিয়েই তাঁরা বিয়ের পিঁড়িতে বসছিলেন। ফলে আনন্দের সীমা ছিল না মুকেশের।
বিয়ে পাকা হয়েছিল প্রায় ৮ মাস আগে। কিন্তু পুষ্পা উধাও হয়ে যাওয়ায় ভেঙে গিয়েছে বিয়ে। হবু কনে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। চার বোন এবং এক ভাই রয়েছে তাঁর। পুষ্পার দিদির বিয়ে হয়েছিল মুকেশের গ্রামে। সেখান থেকেই তাঁদের প্রেমের সূত্রপাত।
পুষ্পার দিদি জানান যে, দুজনের প্রেমের কথা জানাজানি হতেই পরিবার বেঁকে বসে। পরে অবশ্য মেনে নিয়েছিল। বিয়ের জন্য নিজেদের ইচ্ছাতেই এক লক্ষ টাকা এবং প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিতে রাজি ছিল পুষ্পার পরিবার। কিন্তু ছেলের পরিবারের পক্ষ থেকে পণের দাবি বাড়তে শুরু করে। যার জেরে ২ মাস আগে বিয়ে ভেঙে পর্যন্ত গিয়েছিল। কিন্তু পুষ্পার জামাইবাবুর কথায় তাঁর পরিবার ফের রাজি হয়। আবারও পাত্রের পরিবারের নতুন নতুন দাবি সামনে আসতে শুরু করে। বিয়ে ভেঙে যাবে বলে উদ্বেগে ছিলেন পুষ্পা নিজেও।
পুষ্পার দিদি আরও বলেন যে, “গত ৫ মার্চ গায়ে হলুদের রাতে আমাদের ডিনার হয়ে গিয়েছিল। পুষ্পা হোয়াটসঅ্যাপে হবু বরের সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমরাও বিয়ের উপহার গোছাচ্ছিলাম। তখনই এমন কিছু ঘটে যার জেরে বোন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সেই থেকে ওর খোঁজ নেই।” আপাতত নেবুয়া নৌরঙ্গিয়া থানার পুলিশ পুষ্পার খোঁজে তল্লাশি করছে।