অনেক চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞই অভিযোগ করে থাকেন যে ভারতীয় ছায়াছবির ব্যাকরণ এখনও বড় একটা বদলায়নি। যেমন ভাবে যাত্রাপালা হত আমাদের দেশে, সেই অনুকরণেই রাজা হরিশ্চন্দ্রের জীবনকথাকে পর্দায় তুলে ধরেছিলেন দাদাসাহেব ফালকে। বলা হয়, ভারতীয় ছায়াছবি এখনও অনেক ক্ষেত্রেই চিত্রনাট্যের সেই ব্যাকরণ মেনে চলে। আঙ্গিক বদলায়, কাঠামো এক থাকে, ছবির পর্দা জুড়ে থাকে নাচ-গানও।
advertisement
একই ভাবে, এখনও ভারতীয় ছায়াছবির অঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইন্টারভ্যাল। কীভাবে এবং কেন এই ইন্টারভ্যাল প্রথার জন্ম হল, তার নেপথ্য কারণ খুঁজতে গিয়ে মূলত তিনটি বিষয়ের কথা বলে থাকেন চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞরা। যার মধ্যে প্রথমটি ছবি তৈরির ব্যাকরণের সঙ্গেই জড়িত এক রকম ভাবে বলাই যায়।
আরও পড়ুন– নিজের বিয়ে পরে হবে, আগে সেবা… বালাসোরে রেল দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসায় ব্যস্ত এই চিকিৎসক
এই প্রথম বিষয়টি হল ছবির মেয়াদ। একসময়ে ৩ ঘণ্টাকে ন্যূনতম একটা দৈর্ঘ্য বলে মেনে চলা হত ছবি তৈরির ক্ষেত্রে আমাদের এই দেশে। মানুষ তার মাথার ঘাম পায়ে ফেলা পয়সা খরচ করে আসছে ছবির মধ্যে দিনযাপনের গ্লানির আশ্রয় খুঁজতে, তার মেয়াদ কম হলে চলে! এদিকে ৩ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে একটানা বসে থাকা আবার বিরক্তিরও কারণ হতে পারে। তাই শুরু হল ইন্টারভ্যালের পালা, যাতে দর্শকরা একটু হাত-পা ছড়িয়ে নিতে পারেন।
দ্বিতীয় বিষয়ের সঙ্গেও ছবির মেয়াদের একটা সম্পর্ক আছে। এত বড় ছবি, একটা রিলে তার পুরোটা না ধরাই স্বাভাবিক! এর জন্য দরকার হত রিল বদলানোর। সেই মাঝখানের সময়টুকুই তকমা পেয়ে গেল ইন্টারভ্যাল নামে। নির্মাতারাও এমন ভাবে ছবি বানাতে শুরু করলেন যাতে প্রথম ভাগের চেয়ে দ্বিতীয় ভাগের জন্য দর্শকের টান বাড়ে।
কিন্তু এই দুই বিষয়ই সেকালের কথা, ফলে ইন্টারভ্যাল ঠিক শুরুর কারণ না হলেও কেন টিঁকে গেল এদেশে, তার বৈষয়িক দিকটায় চোখ রাখতে হয়। ইন্টারভ্যালের সময়ে যে ব্যবসা হয়, তা টিকিটের টাকার বাইরেও একটা ভাল মতো লাভের মুখ দেখায় ছবিঘরকে। তাই চিপস, পপকর্ন, পানীয়, আরও নানা খাবারের সঙ্গে ইন্টারভ্যাল ভারতীয় ছবির অপরিহার্য অঙ্গ। মাল্টিপ্লেক্স হোক বা সিঙ্গল স্ক্রিন, ইন্টারভ্যাল ছাড়া ভারতীয় ছবি হয় না!