TRENDING:

এই ব্যক্তি না থাকলে আজ বৈষ্ণোদেবীর মন্দির পাকিস্তানের দখলে থাকত, ‘নওশেরার সিংহ’-কে চেনেন?

Last Updated:

১৯১২ সালের ১৫ জুলাই মৌ জেলার বিবিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ব্রিগেডিয়ার উসমান। তাঁর পিতা কাজি মহম্মদ ফারুক ছিলেন বেনারসের কোতোয়াল।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
নয়াদিল্লি: সময়টা ১৯৪৭ সালের অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ। সদ্য স্বাধীন হয়েছে দেশ। শীত কড়া নাড়ছে দরজায়। কাশ্মীর উপত্যকায় চলছে ঝিরিঝিরি তুষারপাত। সেই সময় আচমকা জম্মু-কাশ্মীর আক্রমণ করে পাকিস্তান। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ তারা ঢুকে পড়ে শ্রীনগরের ভিতর। ভারত কিছু সেনা পাঠালেও তাদের রোখা সম্ভব হয়নি। পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্য ছিল, শ্রীনগর হয়ে জম্মু পৌঁছে হরি নিবাস প্রাসাদ থেকে মাতা বৈষ্ণো দেবীর গুহা পর্যন্ত দখল করা। কিন্তু একজন তাদের সামনে খাড়া পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে পড়েন। তিনি ব্রিগেডিয়ার মহম্মদ উসমান।
ব্রিগেডিয়ার মহম্মদ উসমান
ব্রিগেডিয়ার মহম্মদ উসমান
advertisement

কে ছিলেন ব্রিগেডিয়ার উসমান: ১৯১২ সালের ১৫ জুলাই মৌ জেলার বিবিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ব্রিগেডিয়ার উসমান। তাঁর পিতা কাজি মহম্মদ ফারুক ছিলেন বেনারসের কোতোয়াল। ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধি দিয়েছিল। উসমানের বাবা চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলেও পুলিশে চাকরি করুক। কিন্তু ভাগ্যদেবী অন্য কিছু ভেবেছিলেন। আসলে শৈশবে উসমান তোতলা ছিলেন। তাই পুলিশে যোগ দিতে পারেননি। উসমান ঠিক করেন, তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেবেন। সেই মতো স্যান্ডহার্স্টের (মিলিটারি কলেজ) ফর্ম পূরণ করেন। নির্বাচিতও হন। স্যাম মানেকশ স্যান্ডহার্স্টে তাঁর সহপাঠী ছিলেন, পরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান হন।

advertisement

আরও পড়ুন– লক্ষ্য ২৪, বাংলার ৪২ ইনচার্জ, সর্বভারতীয় স্তরেও সাত মোর্চায় নতুন ইনচার্জ পদ্ম শিবিরের

১২ বছর বয়সেই কুয়োয় ঝাঁপ: উসমানের সাহসিকতার অনেক গল্প আজ ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১২ বছর। গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। দেখলেন, একটা কুয়োর কাছে অনেক লোক ভিড় করে আছে। কাছে গিয়ে শুনলেন, একটা শিশু কুয়োয় পড়ে গিয়েছে। তাকে তোলা যাচ্ছে না। লোকজন হা-হুতাশ করছে। ছোট উসমান কালক্ষেপ না করে কুয়োয় ঝাঁপ দিলেন। শিশুটিকে নিয়ে উঠে এলেন নিরাপদে।

advertisement

পাকিস্তানি সেনার আক্রমণ: এবার ১৯৪৭-এর ঘটনায় ফেরা যাক। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানি সেনা রজৌরিতে ঢুকে পড়ে। ২৪ নভেম্বর তারা দখল করে ঝাংগড়। পরের টার্গেট ছিল নওশেরা। একবার নওশেরা দখল করতে পারলে জম্মু হাতের মুঠোয় চলে আসবে। সেই সময় নওশেরায় ৫০ প্যারা ব্রিগেডের নেতৃত্বে ছিলেন উসমান। পাকিস্তানি সেনা নওশেরা ঘিরে ফেলে। ২ দিনে ৩ বার হামলা করে তারা। কিন্তু উসমানকে কাবু করতে পারেনি। ৩ বারই হেরে যায় পাকিস্তানি সেনা।

advertisement

জেনারেল কারিয়াপ্পা কী উপহার চেয়েছিলেন: ১৯৪৮ সালের জানুয়ারিতে লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে এম কারিয়াপ্পা নওশেরা পৌঁছন। কিছুদিন আগেই তিনি ওয়েস্টার্ন কমান্ডের দায়িত্ব পান। জেনারেল কারিয়াপ্পা নওশেরায় ব্রিগেডিয়ার উসমান এবং তাঁর কন্টিনজেন্টের সৈন্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যাওয়ার সময় চান উপহার। জেনারেল কারিয়াপ্পা ব্রিগেডিয়ার উসমানকে বলেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে একটা উপহার চাই। সেটা হল ‘কোট’। আপনি কোট দখল করুন। কারণ পাকিস্তানি সেনা কোটকে ট্রানজিট ক্যাম্প হিসাবে ব্যবহার করছে’।

advertisement

আরও পড়ুন– মীন রাশি; দেখে নিন চলতি বছরে আপনার রাশিফল নিয়ে কী জানাচ্ছেন জ্যোতিষী চিরাগ

কোট যুদ্ধ: নওশেরা থেকে কোট-এর দূরত্ব ৯ কিলোমিটার। উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। ব্রিগেডিয়ার উসমান এই অপারেশনের নাম দেন ‘কিপার’। ভারতীয় সেনারা দুদিক থেকে আক্রমণ করে। জম্মু এয়ারবেস থেকে হামলা চালায় এয়ার ফোর্স। ১৯৪৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় সেনা কোট প্রায় জয় করে ফেলেছিল। কিন্তু হঠাৎ আশেপাশের গ্রামে খবর চাউর হয়ে যায়। গ্রামবাসীরাও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এমনটা যে হতে পারে ব্রিগেডিয়ার উসমান আগেই আন্দাজ করেছিলেন। তাই দুই কোম্পানি সেনা লুকিয়ে রাখেন। গ্রামবাসীরা আক্রমণ করতেই তাঁদের পাঠানো হয়। সকাল ১০টার মধ্যে কোটের দখল নেয় ভারতীয় সেনা।

‘নওশেরার সিংহ’: কোট বিজয়ের মাত্র ৫ দিন পর, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তায় স্থানীয় আদিবাসীরা আবার একত্রিত হয়। ফের নওশেরা আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। বিবিসি হিন্দির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নওশেরার যুদ্ধে প্রায় ১১,০০০ আদিবাসী অংশ নিয়েছিল। ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত লড়াই চলে। শত অসুবিধা সত্ত্বেও, ভারতীয় সেনা পিছু হটেনি। আদিবাসীদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। বাছাই করা কিছু সেনা আর রসদ নিয়ে পাকিস্তানের সমস্ত পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দেন উসমান। পান বীরের তকমা। তাঁকে বলা হয় ‘নওশেরার সিংহ’। নওশেরায় হারের পর ব্রিগেডিয়ার উসমানের নামে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পাকিস্তানি সেনা। তখনকার দিনে এটা বিশাল অঙ্কের টাকা।

আরও পড়ুন- মকর রাশি; দেখে নিন চলতি বছরে আপনার রাশিফল নিয়ে কী জানাচ্ছেন জ্যোতিষী চিরাগ

‘বিছানায় শোব না’: ব্রিগেডিয়ার উসমানের পরবর্তী কাজ ছিল ঝাংগড়কে পাকিস্তানের দখল থেকে মুক্ত করা। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ঝাংগড়কে মুক্ত না করা পর্যন্ত বিছানায় শোব না। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয় ‘বিজয়’। ১২ মার্চ এবং ১৮ মার্চ, ভারতীয় সেনাবাহিনী ঝাংগড় দখল করে। বিবিসি হিন্দির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝাংগড় জয়ের পর ভারতীয় সেনারা পাশের গ্রাম থেকে খাট নিয়ে আসে। ব্রিগেডিয়ার উসমান সেদিন খাটে ঘুমোন।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
বাংলার বুকে রাজস্থানি মন্দির! কালীপুজোয় বড় চমক নিয়ে হাজির হৈ চৈ সংঘ
আরও দেখুন

মাত্র ৩৬ বছর বয়সে শহিদ: ১৯৪৮ সালের ১৩ জুলাই পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে লড়াইয়ে শহিদ হন ব্রিগেডিয়ার উসমান। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৬ বছর। শেলের টুকরো তাঁর বুক ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। তাঁর দেহ আনা হয় দিল্লিতে। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁর মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়। মরণোত্তর ‘মহাবীর চক্র’ সম্মানে ভূষিত হন উসমান। অনেকে বলেন, তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো ভারতের প্রথম মুসলিম সেনাপ্রধান হতেন।

বাংলা খবর/ খবর/পাঁচমিশালি/
এই ব্যক্তি না থাকলে আজ বৈষ্ণোদেবীর মন্দির পাকিস্তানের দখলে থাকত, ‘নওশেরার সিংহ’-কে চেনেন?
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল