চিনের সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচিত এই পরিষেবার ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা সাধারণত ৫ মিনিটের আলিঙ্গনের জন্য ২০ থেকে ৫০ ইউয়ান (ভারতীয় টাকায় আনুমানিক ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা) পর্যন্ত খরচ করছেন। যা প্রথমে ছিল নিছক আবেগ-ভরা একটি অনলাইন পোস্ট, সেটাই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরিণত হয়েছে এক ক্ষুদ্র কিন্তু বিস্তৃত মাইক্রো-ইন্ডাস্ট্রিতে—স্বল্পক্ষণে মানসিক স্বস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
advertisement
মায়াপুর যাওয়া এবার একদম সহজ! শিয়ালদহ থেকে ৩ জোড়া EMU ট্রেন পরিষেবা চালু ঘোষণা! জানুন বিশদে
এলপিজি এবং সিএনজি গ্যাসের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ! ব্যবহারেও আলাদা, কোনটি কেমন বিশদে জেনে নিন
এই প্রবণতার সূচনা হয় এক কলেজছাত্রীর অনলাইন পোস্ট থেকে। থিসিসের চাপে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন, এক বন্ধুকে আলিঙ্গন করতেই তাঁর মধ্যে এক ধরনের শান্তি নেমে আসে। সেই পোস্টে লক্ষাধিক মন্তব্য আসতে থাকে। অনেকেই ‘হাগ থেরাপি’ দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তা বন্ধু-পরিচিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে চ্যাট অ্যাপের মাধ্যমে সংগঠিত, নির্ধারিত অর্থের বিনিময়ে সেবায় পরিণত হয়।
বর্তমানে অধিকাংশ মহিলা নিরাপত্তা ও সীমারক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে এই ‘ম্যান মাম’-দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পার্ক, মেট্রো স্টেশন বা শপিং মলের মতো জনবহুল জায়গায়। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এ উদ্ধৃত এক মহিলা জানান, তিন ঘণ্টা অতিরিক্ত কাজের পর তিনি আলিঙ্গন-সেবাটি নেন। ওই ব্যক্তি তাঁর কাঁধে হাত রাখেন, অফিসের চাপ ও দুশ্চিন্তা মন দিয়ে শোনেন, এবং আলিঙ্গনের পর তাঁর মনে হয় বোঝা অনেকটাই হালকা হয়েছে।
‘ম্যান মাম’ শব্দবন্ধটি প্রথমে ব্যবহার হতো শরীরচর্চায় চর্চিত অ্যাথলেটিক যুবকদের জন্য। এখন এর নতুন সংজ্ঞা—শক্তিশালী শারীরিক গঠন, সঙ্গে নরম স্বভাব, ধৈর্য, মনোযোগী আচরণ—এই দুইয়ের মিলিত উপস্থিতি। বাহ্যিক চেহারা, ভঙ্গি, কথাবার্তার উষ্ণতা ও সম্মানজনক ব্যবহার—এসবই পরিষেবা-প্রদানকারী পুরুষদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নেয়। কিছু ক্ষেত্রে লম্বা বা অ্যাথলেটিক মহিলারাও এই ভূমিকা গ্রহণ করছেন।
এই তরুণদের অনেকেই জানান, উপার্জনের পাশাপাশি অন্যের মানসিক ভার কমিয়ে দিতে পারার অনুভূতিই তাঁদের সবচেয়ে তৃপ্তি দেয়। জৌ নামের এক পরিষেবা-দাতা নাকি অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই ৩৪টি আলিঙ্গন দিয়ে ১,৭৫৮ ইউয়ান আয় করেন। আরেকজন বলেন, এই কাজ তাঁর আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে—কেউ বিপদের মুহূর্তে তাঁর ওপর ভরসা রাখতে পারছে, এই অনুভূতি তাঁকে ‘উপযোগী’ করে তোলে।
ব্যস্ত ফুটপাথে “৫ মিনিট ৫০ ইউয়ান”-এর মতো হার লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকা দৃশ্যও এখন কিছু শহরে দেখা যায়। পড়াশোনার পাশাপাশি কিংবা দিনের চাকরির বাইরে তাঁরা এই পার্ট-টাইম সুযোগ গ্রহণ করেন।
এই ট্রেন্ডের মূলে রয়েছে চিনের তরুণ প্রজন্মের নিঃসঙ্গতার গভীরতর বাস্তবতা। অনলাইনে যতই সংযুক্ততা থাকুক, বাস্তব জীবনে অনেকেই বিচ্ছিন্নতায় ভোগেন। বাড়তে থাকা জীবনযাত্রার খরচ, চাকরির অনিশ্চয়তা, কঠোর অ্যাকাডেমিক চাপ—সব মিলিয়ে মানসিক সুস্থতায় বড় প্রভাব পড়েছে। অনেক মহিলা আলিঙ্গনের পর কফি, স্ন্যাকস অথবা ছোট উপহারও দেন কৃতজ্ঞতাস্বরূপ।
