রবিবারের সকাল। গ্রামের প্রান্তে থাকা একটি পুরনো, বন্ধ ঘর থেকে তীব্র পচা গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। গন্ধ এতটাই ভয়ানক ছিল যে, স্থানীয় বাসিন্দা সুরেশ তা সহ্য করতে না পেরে থানায় ফোন করে বসেন। ঘরের বাইরে ছিল বড় একটি তালা। জানালা ভেতর থেকে আটকানো। অথচ ভেতর থেকে দেহ পচা গন্ধ।
আরও পড়ুন: বলুন তো, ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রী চিনে আম গাছ পাঠিয়েছিলেন? ৯৯% মানুষই জানেন না সঠিক উত্তরটি…
advertisement
বেশ কিছুক্ষণ প্রতীক্ষার পর পুলিশ আসে। প্রকাণ্ড তালা ভাঙা হয়। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ঘরের ভিতরে যেন নেমে আসে এক থমকে যাওয়া সময়। মেঝেতে পড়ে রয়েছে এক বৃদ্ধের পচাগলা দেহ। গায়ের চামড়া খসে পড়েছে, শরীরের চারপাশে মাছির ঝাঁক ভনভন করছে চারপাশে। এ যেন কোনও গল্পের দৃশ্য নয়, বাস্তবের হাড় হিম করা সত্য।
প্রশ্নটা এখানেই—ঘরের ভেতরে মানুষ, বাইরে তালা, তাহলে…? ৮০ বছরের ওই বৃদ্ধ, মৌজি রাম, বহু বছর ধরে একাই থাকতেন। বড় ছেলে মারা গেছেন আগেই। ছোট ছেলে ছিল এলাকায়, তবে কয়েকদিন ধরেই নিখোঁজ। কেউ জানে না সে কোথায়। গ্রামবাসীরা বলছেন, বহুদিন কেউ বৃদ্ধকে দেখেনি। কিন্তু বাইরে যদি তালা লাগানো ছিল, তাহলে ঘরের ভেতরে তিনি কীভাবে থাকলেন?
আরও পড়ুন: চুল খেয়ে পেটের ভেতরে আধা কেজির চুলের গাঁট! অপারেশনে প্রাণ বাঁচল তরুণীর…
এই বিষয়টা ঘিরেই আপাতত একাধিক প্রশ্ন৷ পুলিশ বলছে, বিষয়টা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। এমনও হতে পারে, বৃদ্ধের মৃত্যু স্বাভাবিক হলেও কোনো ব্যক্তি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যায়, যাতে কেউ ঘরের ভিতরে প্রবেশ না করতে পারে। আবার অনেকে বলছেন, হয়তো এই মৃত্যু আসলে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত হত্যার ফল।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা সকরোহ গ্রাম আতঙ্ক আর রহস্যের জালে জড়িয়ে পড়ে। একে একে পুলিশ জেরা করছে প্রতিবেশী, আত্মীয় এবং সম্ভবত হারিয়ে যাওয়া ছোট ছেলেকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ফরেনসিক দলও ঘটনাস্থল খতিয়ে দেখছে।
এই মৃত্যু কীভাবে ঘটল, কেন বাইরে তালা লাগানো ছিল, কোথায় গেল ছেলে, আর আদৌ কি এটা মৃত্যু নাকি খুন—এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও সময়ের অপেক্ষায়। শুধু সকরোহ নয়, আজ গোটা জেলা তাকিয়ে আছে এক উত্তরবিহীন রহস্যের দিকে। হামিরপুরের বड़সর থানার এক পুলিশ কর্তা বলেছেন, “বৃদ্ধ যদি ভেতরে ছিলেন, তাহলে বাইরে তালা কীভাবে লাগল? স্বাভাবিক মৃত্যু হলে দরজার তালা কে দিল? সন্দেহ থেকেই যায়।”
এই ঘটনা যেন এক নিঃশব্দ চিৎকার। একটি তালাবন্ধ ঘরের অন্ধকারে চাপা পড়ে থাকা এক অস্পষ্ট মৃত্যুর গল্প, যার শেষে এখনও লেখা হয়নি।