সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে শিশু অপহরণের এক গায়ে কাঁটা দেওয়া ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গিয়েছে যে এক ব্যক্তি আচমকাই থানায় এসে হাজির হন। তাঁর জামা-কাপড় ছেঁড়া, পায়ে কোনও জুতো নেই। হতশ্রী সেই ব্যক্তির সর্বাঙ্গে অত্যাচারের ছাপ স্পষ্ট। রাজু নামে চতিনি আত্মপরিচয় দেন। সকাতরে পুলিশকে বলেন তাঁকে সাহায্য করতে। জানান যে তাঁর যখন ৭ বছর বয়স ছিল, সেই সময়ে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল।
advertisement
বর্তমানে রাজুর বয়স ৩৮ বছর। পুলিশের কাছে তিনি জানিয়েছেন যে ছোটবেলায় স্কুলে পড়ার সময়ে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছিল। রাজুর বিবৃতি অনুযায়ী তিনি এবং তাঁর বোন স্কুল থেকে একা বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময়ে সুযোগ বুঝে দুষ্কৃতীরা তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। রাজু জানিয়েছেন যে তাঁকে রাজস্থানের এক বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। সেই পরিবার তাঁর উপরে অকথ্য শারীরিক অত্যাচার করত, সারা দিন ধরে খাটাত। সারা দিনে খেতে দেওয়া হত শুধু একটা রুটি। যাতে পালাতে না পারেন, সেই জন্য তাঁকে রাতে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত।
ওই অপরিসীম অত্যাচারের মধ্যেও রাজু জানিয়েছেন যে ওই বাড়ির মালিকের ছোট মেয়ের কাছ থেকে তিনি সহানুভূতি পেয়েছিলেন। ওই মেয়েটি হনুমানজির ভক্ত, সে রাজুকেও মন-প্রাণ দিয়ে সঙ্কট থেকে উদ্ধারের জন্য ঠাকুরকে ডাকতে বলত। একদিন সুযোগ পেয়ে রাজু পালিয়ে যান। প্রথমে ট্রাকে করে এসে পৌঁছন দিল্লিতে। কিন্তু দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে কোনও রকম সহযোগিতা তিনি পাননি বলেই দাবি করেছেন। এর পর ঘুরতে ঘুরতে ২২ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে তিনি গাজিয়াবাদে এসে হাজির হন।
গাজিয়াবাদ পুলিশ রাজুকে জুতো-জামা দেয়, পেটভরা খাবার দেয়। পরিবারকে সনাক্ত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজুর খবর দেওয়া হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে ১৯৯৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সাহিবাবাদ এলাকা থেকে রাজু নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের তরফে থানায় রিপোর্ট লেখানো হলেও তার কোনও খোঁজ মেলেনি। এবার ৩১ বছর পরে বাড়িতে ফিরলেন রাজু, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে খোড়া থানা এলাকায়।
আরও পড়ুন– ভাড়ায় বউ পাওয়া যায় জানেন? ‘এই’ দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়, কত ভাড়া, কীভাবে যোগাযোগ করবেন দেখুন
মা রাজুকে দেখেই ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন। কপালের কাটা দাগ এবং বুকের তিল দেখে তিনি ছেলেকে সনাক্তও করেছেন। এখন পরিবারের সঙ্গে রাজু নিজের বাড়িতেই রয়েছেন। তবে সম্পূর্ণ রূপে নিঃসন্দিগ্ধ হওয়ার জন্য পুলিশ এখনও মামলা বন্ধ করে দেয়নি। আসলে রাজুর ভাবগতিক তাদের স্বাভাবিক বলে মনে হয়নি। তাছাড়া তিনি বাড়ি থেকেও বারদুয়েক পালানোর চেষ্টা করেছেন। ফলে, পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে যে এবার ডিএনএ টেস্ট করানো হবে, একমাত্র তার পরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।