কিন্তু শাস্ত্র বলে সেই আদলকে ফুটিয়ে তুলতে কয়েকটি জিনিস আবশ্যক ৷ যেমন, গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিস, পবিত্র গঙ্গার জল আর নিষিদ্ধপল্লীর মাটির মিশ্রণে তৈরি হবে দেবীমূর্তি ৷ আর সেই কারণেই সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় বেশ্যালয়ের মাটি ৷ কিন্তু কেন এই রীতি ?সমাজে যাঁদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনার পাহাড় জমে উঠেছে যাঁদের দেওয়াল বেয়ে, ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি তাঁদের ঘরের মাটিই আবার দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ ৷ কিন্তু কেন ? বলা হয়, পুরুষ মানুষ পতিতালয়ে গিয়ে যখন বারাঙ্গনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন, তখন তিনি জীবনে সঞ্চিত সমস্ত পুণ্য সেখানেই ফেলে আসেন ৷ আর সংগ্রহ করেন ঘড়া ভর্তি পাপ ৷
advertisement
চিরাচরিতভাবে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার বাস। পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তাঁরা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ রাখতে চান। পবিত্র রাখতে চান। ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি ৷ এই আচার থেকে বোঝানো হয় যে, নারী মায়ের জাতি। নারীর ওরসেই পুরুষের জন্ম। নারীকে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয় অর্থাৎ যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সন্মান করতে হবে। নারী কোখনও অপবিত্র হতে পারে না এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে ৷ শরৎকালে হয় দেবীর অকাল বোধন ৷ এই সময় মহামায়া ৯টি রূপে পূজিত হন ৷ এই নবম রূপটিই আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি ৷ মনে করা হয়, সে কারণেও এই রীতির জন্ম হয়েছে ৷