গাজিয়াবাদ থেকে একটি অদ্ভুত ঘটনা সামনে এসেছে। সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পৌর কর্পোরেশন এবং একজন ব্যবসায়ীর মধ্যে এমন বিরোধ শুরু হয়েছে যে তা থামছেই না। আসলে, সাহিবাবাদ থেকে বসুন্ধরা যাওয়ার পথে ব্যবসায়ীর মার্সিডিজ গাড়িটি জমা জলে আটকে গিয়ে থেমে যায়। গাড়িটি মেরামত করতে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এই ক্ষতির পর ব্যবসায়ী অমিত কিশোর পৌর কর্পোরেশনকে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু বিষয়টি এখানেই শেষ হয়নি। এখন পৌর কর্পোরেশন এই বিষয়ে জবাবদিহি করার সময় ব্যবসায়ীর উপর প্রশ্ন তুলেছে। এমনকি ব্যক্তিকে একজন পেশাদার অভিযোগকারীও বলেছে, মানে যিনি অভিযোগ করে টাকা আদায় করেন!
advertisement
ঠিক কী ঘটেছে: ২৩ জুলাই, ২০২৫ তারিখের ঘটনা। বসুন্ধরা সেক্টর-১১-এর বাসিন্দা অমিত কিশোর সাহিবাবাদ থেকে তাঁর মার্সিডিজ জিএলএ ২০০ ডি গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন। কিন্তু বাড়ির কাছে পৌঁছনোর আগেই তাঁর মনে হয়েছিল যেন তিনি রাস্তা নয়, নদী পার হচ্ছেন। প্রবল বৃষ্টির পর এত জল ছিল যে রাস্তা আর দেখা যাচ্ছিল না। রাস্তার মাঝখানে তাঁর মার্সিডিজ গাড়িটি জলে আটকে যায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গাড়ির পুরো সিস্টেম বসে যায়। গাড়িটি চালুও হচ্ছিল না এবং সরানোও যাচ্ছিল না। ইলেকট্রনিক সিস্টেম এবং ইঞ্জিন উভয়ই কাজ করা বন্ধ করে দেয়। পরিস্থিতি এমন হয়ে ওঠে যে তাঁকে কোনওভাবে গাড়িটিকে জল থেকে বের করে নয়ডার সার্ভিস সেন্টারে পাঠানোর জন্য ক্রেন ডাকতে হয়। গাড়িটি বিকল হয়ে যাওয়ার এবং লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতির পর অমিত কিশোর গাজিয়াবাদ পৌর কর্পোরেশনকে ৫ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনি নোটিশ পাঠান।
আরও পড়ুন- মৌরি-জোয়ান ভুলে যান, পেটে গ্যাস হলে কাজে আসবে স্রেফ এক চিমটি হিং ! দেখে নিন কী করতে হবে
কর্পোরেশনের যা উত্তর এসেছে: এখন পৌর কর্পোরেশন এই বিষয়ে জবাবদিহি করেছে এবং ব্যবসায়ীর দিকেই প্রশ্নের আঙুল তুলেছে। কর্পোরেশন জানিয়েছে যে অমিত কিশোর একজন পেশাদার অভিযোগকারী এবং ব্যক্তিগত কারণে কর্পোরেশনের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছেন। কর্পোরেশন দাবি করেছে, যে গাড়ির ছবি ভাইরাল হয়েছে তার দিল্লির নম্বর রয়েছে এবং জলের স্তর টায়ারেও পৌঁছয়নি। বৃষ্টির কারণে জমা জলে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন কোনও প্রযুক্তিগত প্রমাণ নেই। পৌর কর্পোরেশন আরও জানিয়েছে যে তারা কতটা কাজ করেছে। এতে বলা হয়েছে যে রেকর্ড বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও সময়মতো ড্রেন পরিষ্কার করা, ড্রোন এবং পাম্প সেট দ্বারা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কর্পোরেশন জানিয়েছে যে শহরে এমন আর কোনও ঘটনা প্রকাশ্যে আসেনি।
আরও পড়ুন– গঙ্গায় পুজো দিতে গিয়ে এ কী কাণ্ড ! নিমেষেই গায়েব হয়ে গেল এই জিনিস, ভাইরাল ভিডিও
অমিত কিশোরের পাল্টা আক্রমণ: ব্যবসায়ী অমিত কিশোর পৌর কর্পোরেশনের প্রতিক্রিয়ার তীব্র জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁকে পেশাদার অভিযোগকারী বলা কর্পোরেশনের দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা তুলে ধরে এবং এটি দেখায় যে যখন একজন সাধারণ নাগরিক প্রশ্ন করেন তখন প্রতিষ্ঠানগুলি জবাবদিহি করার পরিবর্তে তাঁকে অপমান করতে শুরু করে। তিনি বলেন, গাড়ির যদি দিল্লির নম্বর থাকে, তাহলে কি গাজিয়াবাদে এটি চলতে পারে না? এটি বিষয়টি থেকে নজর সরানোর চেষ্টা। গাড়ির টায়ারও জলে ডুবে ছিল না এই দাবি সম্পূর্ণ ভুল। গাড়িটি যখন থামে, তখন জলের স্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছিল এবং ইঞ্জিনে জল প্রবেশ করেছিল। অনুমোদিত পরিষেবা কেন্দ্রও তাদের প্রতিবেদনে এটি নিশ্চিত করেছে।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন যে, এখন কি প্রতিটি নাগরিককে তাঁর অভিযোগের সঙ্গে একজন কারিগরি বিশেষজ্ঞের প্রতিবেদন আনতে হবে? জল জমার দিকে কোনও ব্যক্তির তরফে কর্পোরেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এই প্রথম ঘটনা নয়। শহর জুড়ে জল জমার আরও অনেক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, তা সোশ্যাল মিডিয়াতে হোক বা স্থানীয় সংবাদে। রাস্তায় যানবাহন যেখানে জলে আটকে আছে, সেখানে ড্রোন পর্যবেক্ষণ এবং ড্রেন পরিষ্কারের কর্পোরেশনের দাবি অযৌক্তিক। কর্পোরেশন নিজেই স্বীকার করেছে যে নগরায়নের চাপে ড্রেনের ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, তাই প্রশ্ন উঠছে এর জন্য দায়ী কে?
অমিত কিশোর বলেন যে তিনি তার সাংবিধানিক অধিকারের অধীনে প্রশ্ন করছেন এবং যদি প্রতিষ্ঠানগুলি দায়িত্ব এড়িয়ে যায় তবে তিনি আইনি পথও নিতে প্রস্তুত!