এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভিড় জমে যায়। বিডিও অনিরুদ্ধ সিং চৌহানের বিরুদ্ধে ৩২৩, ৫০৪, ৫০৬ এবং ৩৩২ ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। জানা গিয়েছে, ঘটনার পর থেকে বিডিও পলাতক। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
জেল হবে না কি চাকরি যাবে: কোনও সরকারি কর্মী যদি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, গালিগালাজ বা মারধর করে, আইনি পরিভাষায় সেটাকে বলা হয় ‘ইনসাবঅর্ডিনেশন’ বা ‘অবাধ্যতা’। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই আইন চলে আসছে। সেনাবাহিনীতে ‘অবাধ্যতা’র জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে’।
advertisement
আরও পড়ুন– রাশিফল ১২ ফেব্রুয়ারি- ১৮ ফেব্রুয়ারি; দেখে নিন এই সপ্তাহ নিয়ে কী জানাচ্ছেন জ্যোতিষী চিরাগ
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট আদর্শ তিওয়ারি নিউজ ১৮-কে বলেন, ‘প্রশাসনের এই ধরনের পরিস্থিতিতে দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রথমটা হল ফৌজদারি পদক্ষেপ। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দ্বিতীয়টি হল, দেওয়ানি পদক্ষেপ। এতে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ক্রিমিনাল অ্যাকশন: আইপিসির ১৬৬, ১৬৬এ, ১৮৬, ৩৫৩ ইত্যাদি ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা যেতে পারে। দোষী প্রমাণিত হলে ২ বছরের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
বিভাগীয় ব্যবস্থা: বিভাগীয় তদন্তের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে দুইভাবে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। প্রথমটি বড় এবং দ্বিতীয়টি ছোট। প্রধান শাস্তির মধ্যে রয়েছে বরখাস্ত করা। ছোটখাটো ক্ষেত্রে কয়েকদিনের ছুটিতে পাঠানো বা বেতন কমানোর মতো শাস্তি হতে পারে। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে লাঞ্ছনা, দুর্ব্যবহার, অশ্লীলতা বা যাই হোক না কেন অভিযোগ সংক্রান্ত সাধারণ ধারায় মামলা দায়ের করা যেতে পারে এবং পুলিশ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে।
পুলিশকে মারধরের শাস্তি কী: পুলিশকে মারধরে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। আইপিসি-র ৫০৬ ধারার অধীনে ২ বছর জেল বা ৩৩০ ধারার অধীনে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড। সঙ্গে আর্থিক জরিমানাও দিতে হতে পারে।
আর্মি, এয়ারফোর্স ও নেভিতে কী নিয়ম: ভারতীয় সেনা, এয়ারফোর্স ও নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর হামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধিতে শাস্তির বিধান রয়েছে। আইপিসির ১৩৪ ধারায় বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী বা নৌবাহিনীর কোনও কর্মচারী বা কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনকালে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আক্রমণ করলে তিনি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন। আর দোষী প্রমাণিত হলে ১ বছর থেকে ৭ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এছাড়া আর্থিক জরিমানাও করা হতে পারে।
কোর্ট মার্শাল হতে পারে: ১৩৪ ধারায় বলা হয়েছে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আক্রমণ অ-জামিনযোগ্য অপরাধ। সেনা, বিমান ও নৌবাহিনীর মামলায়ও সেনা আইন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিচার হয়। কোর্ট অফ এনকোয়ারির পর কোর্ট মার্শালও করা যায়।
আইনজীবী আদর্শ তিওয়ারি জানান, সেনা, এয়ারফোর্স এবং নৌবাহিনীতে কোর্ট মার্শালের সময় দেওয়া কঠোরতম শাস্তিকে বলা হয় ‘ক্যাশিয়ারিং’। সহজ ভাষায়, এটি সবচেয়ে অপমানজনক শাস্তি। ‘ক্যাশিয়ারিং’-এ জনসাধারণের সামনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ইউনিফর্ম, ব্যাচ ইত্যাদি খুলে নেওয়া হয়। সেনাবাহিনীর কর্মীরা এই শাস্তিকে জেলের চেয়েও ভয়ঙ্কর বলে মনে করে।
সরকারি কর্মকর্তাকে মারধর ও গালিগালাজের শাস্তি: সরকারি কাজে বাধাদান, সরকারি কর্মকর্তাকে তার দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া বা তর্ক-বিতর্ক বা মারামারির বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। সরকারি কাজে বাধা দিলে ৩৫৪ ধারার অধীনে ২ বছরের জেল হতে পারে। একই ভাবে, ৫০৪ ধারায় সরকারি কর্মচারীর সঙ্গে মারামারির জন্য ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সরকারি কর্মচারীকে গালি দিলে বা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করলে ২ বছরের জেল হতে পারে। একইভাবে, ৫০৬ ধারায় সরকারি কর্মচারীকে হুমকি দেওয়ার জন্য ৩ থেকে ৭ বছরের সাজা রয়েছে।
সরকারি কর্মচারীকে মারধর করলে ৩৩২ ধারা অনুযায়ী ৩ থেকে ১০ বছরের জেল হতে পারে। একইভাবে, ব্ল্যাকমেলিংয়ের জন্য, ৩৮৩ ৩৮৪, ৩৮৬ ধারায় ৩ থেকে ১০ বছরের সাজা রয়েছে। সরকারি অফিসে জোর করে প্রবেশের জন্য ২ বছরের কারাদণ্ড, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করলে ৩৭৮ ধারায় ৩ বছরের কারাদণ্ড, সরকারি নথি চুরি করলে ৩৭৮, ৩৭৯ ধারায় ৩ বছরের কারাদণ্ড এবং একই ধারায় সরকারি নথি নষ্ট করার জন্য ৩ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।