পুকুর খুঁড়তে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ দিনমজুরদের! বেরিয়ে এল প্রাচীন বিরল মূর্তি; জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ গ্রামবাসীরা
- Published by:Siddhartha Sarkar
- trending desk
Last Updated:
Jamui Latest News: মনে করা হচ্ছে, ওই বিগ্রহটি অষ্টম শতকের পুরনো। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রাচীন যুগের এই মূর্তি উদ্ধার হওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।
advertisement
বিহারের জামুই জেলার ঘটনা। মনে করা হচ্ছে, ওই বিগ্রহটি অষ্টম শতকের পুরনো। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রাচীন যুগের এই মূর্তি উদ্ধার হওয়ার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ নিয়ে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। সবথেকে বড় কথা হল, গ্রামবাসীদের সঙ্গে মতবিরোধ শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসনের। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মঙ্গলবার জামুই জেলায় সিঝৌড়ী গ্রামের সীমরা পুকুরের খননকার্য চলছিল কিন্তু সেই পুকুর খোঁড়ার সময়ই উদ্ধার হয় ভগবান সূর্যের প্রাচীন বিগ্রহটি। অষ্টম শতকের পুরনো মূর্তিটি চকচকে কালো পাথর দিয়ে গড়া। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে তিন ফুট। দেখা যায়, মূর্তির দুই হাতেই রয়েছে পদ্ম ফুল। আর দুই পাশে রয়েছে আরও দু’টি ছোট ছোট প্রতিমা।
advertisement
এহেন দুর্লভ মূর্তি উদ্ধার হওয়ার কথা এলাকায় চাউর হয়ে যায়। ফলে প্রচুর মানুষ তা দেখতে ভিড় জমান সেখানে। সেই সঙ্গে গ্রামবাসীরা ভগবান সূর্যের আরাধনা শুরু করে দেন। আসলে মাটির প্রয়োজনের কারণেই সিঝৌড়ী গ্রামের সিকান্দ্রা এলাকার পুকুর খোঁড়া হচ্ছিল। পুকুর খননে উত্থিত মাটি জমিতে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। খোঁড়ার সময়ই দিনমজুরদের নজরে আসে সেই কালো পাথরের মূর্তি। এরপর চলে আরও খননকার্য। তখনই ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে সম্পূর্ণ মূর্তিটি। এরপর গ্রামবাসীরা ওই বিরল মূর্তিটিকে তুলে নিয়ে গিয়ে মন্দিরে রেখে দেন। গ্রামে এই খবর তো ছড়িয়ে পড়েছিলই, সেই সঙ্গে এই খবর পৌঁছয় সিকান্দ্রা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার অমিত কুমার, সার্কল অফিসার কৃষ্ণ কুমার সৌরভ এবং পুলিশ প্রশাসনের কানেও। আর এ খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন দুই অফিসারই।
advertisement
মূর্তিটি পরীক্ষানিরীক্ষাও করেন তাঁরা। এরপর খবর দেওয়া হয় প্রত্নতত্ত্ব দফতরের কর্তাদেরও। খবর পেয়ে তাঁরা গ্রামে পৌঁছে মূর্তিটিকে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে জাদুঘরে সংরক্ষণ করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এতে বেঁকে বসেন গ্রামবাসীরা। মূর্তিটিকে গ্রামে রেখে দেওয়ার দাবি তোলেন তাঁরা।গ্রামের বাসিন্দা সচিন কুমার রজক এবং রাজীব কুমার প্রস্তাব দেন, গ্রামেই ভগবান সূর্যের একটা মন্দির তৈরি করে স্থাপন করা হোক ওই বিরল মূর্তি। এমনকী এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের জন্য একটি বৈঠকও ডাকা হয়। যেখানে কয়েকশো গ্রামবাসী যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, যে পুকুরের খননকার্যে প্রাচীন বিগ্রহ উদ্ধার হয়েছে, তার পাশেই একটা মন্দির তৈরি করে সেখানেই মূর্তিটিকে স্থাপন করা হবে। বর্তমানে বিরল বিগ্রহটিকে ঠাকুরবাড়ি মন্দিরে রেখে দেওয়া হবে। গ্রামের বাসিন্দা হরদেব সিং বলেন, কোনও পরিস্থিতিতেই এই মূর্তি জেলা প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হবে না। মূর্তির নিরাপত্তার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হচ্ছে।
advertisement
সিকান্দ্রার বিধায়ক প্রফুল্ল মাঝিও ওই বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি গ্রামবাসীদের সমর্থনেই কথা বলেন। তাঁর বক্তব্য, এটা বিশ্বাসের বিষয়। গ্রামবাসীরা তাঁদের গ্রামেই মূর্তিটি রাখতে চাইছেন। ফলে তাতে কারও বাধা দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেই গ্রামবাসীরা মূর্তিটিকে কাঁধে তুলে নিয়ে জয় শ্রী রাম এবং ভগবান সূর্যের নাম জপতে জপতে ঠাকুরবাড়ি মন্দিরে পৌঁছন। এরপর সেখানে শুরু হয় অষ্টযাম।গ্রামবাসীরা রামধুন শুরু করেন। মহিলারাও পৌঁছন মন্দিরে। শুরু হয় মূর্তির আরাধনা।
advertisement
প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. রবি শঙ্কর কুমার গুপ্তা বলেন, এটা ভগবান সূর্যের দুর্লভ মূর্তি, যাঁর মাথায় রয়েছে একটি মুকুট। প্রায় অষ্টম শতকের পুরনো মূর্তিটি পাল যুগের। সবথেকে বড় কথা হল, মূর্তিটি একটুও ভাঙেনি। একেবারে ঠিকঠাক অবস্থায় রয়েছে। মূর্তির দুই হাতে রয়েছে পদ্ম ফুল এবং নীচে রয়েছে দণ্ড আর পিঙ্গল। আগে খননকার্যে ভগবান সূর্যের যেসব মূর্তি উদ্ধার হয়েছে, সেগুলিতে তাঁকে জুতো পরিহিত অবস্থায় দেখা গিয়েছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অন্য দিকে এসডিও অভয় কুমার তিওয়ারি বলেন, দুর্লভ মূর্তিটিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করতে তৎপর জেলা প্রশাসন। কিন্তু গ্রামবাসীরা মন্দির তৈরি করে বিগ্রহটির পূজা করতে চান। ফলে তাঁদের বোঝাতে এখনও কথাবার্তা বলা হচ্ছে।