মাদারিহাটের ২৪টি চা বাগানে ১০০টি বুথ রয়েছে। উপনির্বাচনের ফল বলছে, তৃণমূল কংগ্রেস ৮১ বুথে, বিজেপি ১৯ বুথে জয় পেয়েছে। প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বলছে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে চা বাগানের ৩৫ হাজার ৩৩৮ ভোট। বিজেপি পেয়েছে চা বাগানের ২০ হাজার ৬০৫ ভোট। যদিও কয়েক মাস আগেই লোকসভা ভোটে এই ১০০ বুথের ৫৫টিতে জয় লাভ করেছিল বিজেপি, তৃণমূল কংগ্রেস করেছিল ৪৫ আসনে জয়।
advertisement
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস, সংসদে জানালেন বিদেশমন্ত্রী
চা বলয়ে গোটা বীরপাড়া, মাদারিহাট ব্লক ছাড়াও, জলপাইগুড়ি জেলার সাকোয়াঝোরা ও বিন্নাগুড়ি – এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত মাদারিহাট বিধানসভার অন্তর্ভূক্ত। এর আওতায় রয়েছে টোটোপাড়াও। ২০১৪ সালের প্রবল ‘মোদি ঝড়ে’ও লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রটি জিতেছিল তৃণমূল। তবে মাদারিহাট বিধানসভায় এগিয়ে ছিল বিজেপি। সেই ট্রেন্ড ধরে রেখেই ২০১৬-র বিধানসভাটি জিতে নিয়েছিল গেরুয়া শিবির। এর পর ২০১৯-এর লোকসভা, ২০২১-এর বিধানসভা এমন কি, ২০২৪ সালের লোকসভাতেও এখানে পদ্ম ফুটেছে।
কিন্তু এবার বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে ভিন্ন সুর ছিল এই চা বলয়ে। চা বাগানের শ্রমিকদের পাট্টা দেওয়া থেকে শুরু করে, শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য ক্রেস তৈরি, চা শ্রমিকদের পিএফের জন্য আন্দোলনের মতো বিষয়গুলিও ঘাসফুলকে অক্সিজেন জুগিয়েছে। ডলোমাইট দূষণ থেকে রেলের ওভার ব্রিজ তৈরিতে রেলের গা ছাড়া মনোভাব নিয়েও তারা লাগাতার আন্দোলন করেছে। তা মাদারিহাটের মানুষের মধ্যে প্রভাবও ফেলেছে। তার প্রভাব পড়েছে ইভিএমে। আর এই তিন কারণের যোগফলেই প্রথমবার ঘাসফুল ফুটল মাদারিহাটে।
কোচবিহার জেলা থেকে নবজোয়ার যাত্রা শুরু করেছিলেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে, একাধিক চা বলয় ছুঁয়ে যান তিনি। পরবর্তী সময়ে শ্রমিক সংগঠনের দায়িত্বে থাকা নেতা ঋতব্রত বন্দোপাধ্যায় চা বাগানেও আলাদা করে জনসংযোগ যাত্রা করেন। একাধিক চা বাগানে রাত্রিবাস করার কর্মসূচি নেওয়া হয়। এমন কি, শ্রমিকদের মন বুঝতে তাঁদের দৈনন্দিন চাহিদা বুঝে পরিকল্পনা করেন। তিনিও মনে করেন, এই ভাল ফলের কারণ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে পরিষেবা দেওয়া। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস না দেখিয়ে জনসংযোগের কাজ করে যাওয়া।
মাদারিহাট এক সময়ে ছিল আরএসপি-র শক্ত ঘাঁটি। সেই ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে প্রথম পদ্ম ফোটে। তারপর থেকে একচ্ছত্র আধিপত্য। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে মাদারিহাটে বিজেপির ভোটে অল্প অল্প করে থাবা বসাতে শুরু করে তৃণমূল। উপনির্বাচনে তা ছিনিয়ে নিল।