টোটোতে করে খাবার নিয়ে চলে আসেন শিলিগুড়ির হায়দরপাড়া জিএসএফপি স্কুলের এই শিক্ষিকা। শুরুতে বাড়ি থেকেও এসেছিল চাপ। কোভিডের মোকাবিলায় যখন ঘরবন্দি থাকার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর, তখন মেডিকেলে ছুটে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা এসেছিল পরিবার থেকে। আসবেই না কেন? ক্রমেই বাড়ছিল সংক্রমণের সংখ্যা। সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও। কিন্তু দমান যায়নি তাঁকে। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়ে নেমেছেন যে। কেননা, মেডিকেলের আশপাশের সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রোগীর আত্মীয়রা কি খাবেন? ওদের পাশে দাঁড়াতেই "দিদিমণি"র এই উদ্যোগ।
advertisement
নিজের ঠাকুমা প্রয়াত আশালতা দত্তের নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরী করে নেমে পড়া। "আশালতা ফাউণ্ডেশনই' এখন উত্তরবঙ্গ মেডিকেলের কয়েকশো রোগীর আত্মীয় এবং কিছু স্বাস্থ্য কর্মী থেকে এম্বুলেন্স চালকদের দুপুরের খাবারের ভরসা। প্রতিদিন রান্না করা খাবার নিয়ে মেডিকেলে চলে আসেন "দিদিমণি"। মেনুতে থাকে কোনও দিন ফ্রায়েড রাইস, চিকেন। আবার ডিম-ভাত থেকে সোয়াবিন বা অন্য কোনও সবজি। সঙ্গে পেয়ে যান সংগঠনের কয়েকজনকে। প্রতিদিন দুপুর ১:৩০টায় হাজির হয় দিদিমণির টোটো। সঙ্গে সঙ্গে লম্বা লাইন লেগে যায়।
কেউ এসছেন মালদার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে, কেউ আবার কোচবিহার থেকে। সকলের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন। দফায় দফায় কড়া বিধি নিষেধের সময়সীমা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে দিদিমণির ক্যান্টিনও চলছে। মেডিকেলে পানীয় জলের সমস্যার কথা শুনেছেন। তারপর থেকে পানীয় জলের বোতল নিয়েও হাজির। খুশী রোগীর আত্মীয়রা। হোটেল, লজ বন্ধ থাকায় মেডিকেল ক্যাম্পাসেই রাত কাটাতে হচ্ছে। দুপুরে তাদেরই ভরসা দিদিমণির ক্যান্টিন। সুনন্দাদেবী জানান, 'অনেকেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় কাজ করাটা সম্ভব হচ্ছে। শুরুতে ভয়ে অনেকেই বের হতে চাননি। কিন্তু ওদের কথা ভেবেই ঘরে বসে থাকতে কি আর মন চায়। তাই ছুটে আসা।' পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় স্যানিটাইজেশনের কাজও করছে এই সংগঠন।