আফগানিস্তানে তালিবানি হামলা শুরুর পর থেকে কোনওক্রমে নিজেকে গৃহবন্দি রেখেছিলেন। ঘরের দরজা বা জানালা খুললেই তালিবানিদের হিংসা নজরে পড়ত। গোটা কাবুলের রাস্তা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গাড়িতে চেপে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তালিবানরা। অবাধে চলছে গুলি। গুলির শব্দে উধাও হতো চোখের ঘুম। সব ভুলে তখন ছিল শুধু নিজেকে প্রাণে বাঁচিয়ে রাখার তাগিদ। বাইরে তখন চলছে তালিবানি শাসন। এক ভয়ানক সন্ত্রাসের ছবি এখনও ভাসছে প্রেমরাজের চোখে।
advertisement
সাড়ে চার বছর ধরে কাবুলে আমেরিকার দূতাবাসে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করে আসছিলেন দার্জিলিংয়ের প্রেমরাজ। দীর্ঘ বছর ছিলেন সেনাবাহিনীতে। দেশের সীমান্ত পাহারা দেওয়ার সময়েও কখনওই এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত এই সেনাকর্মী যেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না বাড়ি ফিরে এসেছেন। হাড় হিম করা ছবি এখনও চোখে ভাসছে। প্রতিনিয়ত পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বললেও ফিরতে পারবেন, ভাবতে পারেননি।
গত ১৫ অগাস্ট আমেরিকারই বিমানে চাপেন প্রেমরাজ রানা। কাবুল থেকে কুয়েত, কাতার হয়ে টানা ৪ দিন বিমান যাত্রা। শেষে পৌঁছন নেপালে। তারপর নেপাল থেকে সড়ক পথে লেবংয়ের বাড়ি ফেরেন। এখনও কাবুলে তালিবানি রাজের ছবি চোখে ভাসছে। তালিবানি অত্যাচার, শাসনের কাহিনী শুনেছেন। এবারে নিজের চোখে তা দেখে এলেন। সেইসব ছবি মনে পড়তেই শিউরে উঠছেন তিনি।
তালিবানেরা কাবুল দখল করতেই আমেরিকার দূতাবাস ফাঁকা হয়ে যায়। কোনওক্রমে বিমানবন্দরের কাছে আশ্রয় নেন প্রেমরাজ। বাবা ফিরে আসায় খুশি মেয়েও। সেও ভাবতে পারেনি বাবাকে ফিরে পাবে। সর্বদাই চোখ ছিল টিভি আর মোবাইল স্ক্রিনে। গত কয়েকটা দিন মা ও মেয়ের কীভাবে সময় কেটেছে, তা আজ আর বলতে পারছিলেন না। সব ভুলে প্রার্থনা করছিলেন। অবশেষে প্রেমরাজ বাড়ি ফিরতেই লেবংয়ের রানা পরিবারে খুশির আবহ।
পার্থ সরকার