সেদিনের ঘটনা মনে করতে গিয়ে কার্যত ভেসে ওঠে এক অসহায় ছবি। নিজেদের সেই অবস্থার কথা বলছিলেন মিতালী অধিকারী। স্বামী, ভাসুর, জা, ভাসুরের ছেলে, নিজের দুই সন্তানকে নিয়ে মাল নদীর ঘাটে ভাসান দেখতে গিয়েছিলেন তাঁরা।
আরও পড়ুন: ১ মিনিটে ঝকঝকে পরিষ্কার হবে জলের ট্যাঙ্ক! সহজ নির্ঝঞ্ঝাট এই ‘ছোট্ট’ কাজেই কেল্লাফতে
মিতালী দেবী জানিয়েছেন, “আমরা বাড়ির সকলে এক সঙ্গেই ভাসান দেখতে যাই। এবারও গিয়েছিলাম। সবাই আনন্দ করেছি। স্থানীয়দের অনেকের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। যেহেতু ভাসানের জায়গা বদল করা হয়েছে, তাই আমরা অনেকেই চেয়েছিলাম ভাসানের জল মাথায় ছুঁয়ে আসতে৷ সেইমতোই আমরা তখন ওখানে যাই৷ গাড়ি নামার রাস্তাও করা হয়েছিল। সে অর্থে জলও ছিল না। কারণ একদিকে বোল্ডার ফেলে নদীর স্রোত অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে মানুষ সেই দিকেই যাচ্ছিল। এরই মধ্যে নদীর জল যখন বাড়তে শুরু করে দেয়, তখনই মাইকে ঘোষণা করা হয়, সবাই নদী ছেড়ে উঠে চলে আসুন। আর তখনই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আমি আমার ছোট ছেলেকে নিয়ে জলে পড়ে যাই। জলের স্রোতে আমার ছেলে ভেসে যাচ্ছিল। আমি ওর হাত ধরে আটকানোর চেষ্টা করি। আমার নীচে ও পড়ে যায়। এরপর আমাদের ওপর দিয়ে লোক চলে যাচ্ছিল। এক পুলিশ কর্মী আমাদের টেনে তোলার চেষ্টা করলেও তিনি পারেননি। এরই মধ্যে আমার স্বামী চলে আসেন। ওই অবস্থায় তিনি আমাদের টানেন। এর মধ্যে অপর এক পুলিশ আমাকে পাঁজাকোলা করে তোলে। আমার স্বামী আমার ছোট ছেলেকে তুলে আনে।”
advertisement
মিতালীদেবীর বক্তব্য অনুযায়ী, সেই দিন যা অবস্থা হয়েছিল তাতে তিনি হয়তো হারিয়েই ফেলতেন সন্তান সৌম্যজিতকে। তাঁর কথায়, “অনেক কষ্টে আমরা উদ্ধার হয়েছি। আমার বড় ছেলে আবার ভেসে গিয়ে একটা পাথরে আটকে যায়। আমরা সবাই প্রাণে বেঁচে গেলেও, আমার দেওরের ছেলেকে আমরা কেউ বাঁচাতে পারলাম না।” অধিকারী পরিবারের এই অবস্থা দেখে শোকে কাতর গোটা এলাকা। তবে মিতালী দেবী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আর কোনওদিন ভাসানের ঘাটে যাবেন না তিনি। অভিশপ্ত সেই মুহূর্ত আজও ঘিরে আছে তাঁর চেতনা।