মঙ্গলবার ডুয়ার্স কন্যাতে আয়োজিত হয় এক জরুরি বৈঠক। সেখানেই বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান নল রাজার গড়ের নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোচ মহারাজ নরনারায়ণের নামে নতুন নামকরণের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে স্বাভাবিকভাবেই সকলে সম্মতি জানিয়েছেন। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক আর বিমলা, প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ডঃ আনন্দ গোপাল ঘোষ, পশ্চিমবঙ্গ রাজবংশী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বোর্ডের চেয়ারম্যান বংশীবদন বর্মন, আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল সহ বিভিন্ন বিশিষ্টজন ও প্রত্নতাত্বিকরা।
advertisement
উল্লেখ্য জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের চিলাপাতার জঙ্গলে ঐতিহাসিক নল রাজার গড় অবস্থিত। স্থানীয়ভাবে এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য নল রাজার গড় নামেই পরিচিত। আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল সম্প্রতি এই ঐতিহাসিক গড়ের সংস্কার ও সংরক্ষণ করে তা পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার উদ্যোগ নেন। সেখানে ওপেন এয়ার মিউজিয়াম সহ নানান দর্শক আকর্ষণের বিষয় গড়ে তুলে পর্যটনের বিকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ৪ হাজার টাকার পাট বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার! তবুও মুখে হাসি নেই চাষিদের! জানুন আসল ভিলেন কে…
বিধায়কের এই উদ্যোগের পর জেলা প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে আছে। জেলার প্রশাসনিক কর্তারা ওই এলাকায় গিয়ে পরিদর্শনও করে আসেন। এরপরই নল রাজার গড়ের নাম নিয়ে বিভ্রান্তি ও খানিকটা বিতর্ক দেখা দেয়। সেই বিভ্রান্তি ও বিতর্কের সমাধান করতে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনকে একটি বৈঠক ডাকার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার জেলাশাসক আর বিমলা বৈঠক দেখেন। বৈঠকে নাম নিয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হওয়ায় সকলেই খুশি।
বৈঠক শেষে ইতিহাসবিদ আনন্দ গোপাল ঘোষ বলেন, নল রাজার গড়ের নাম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি বিতর্ক বা বিভ্রান্তি ছিল। অবশেষে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে বৈঠক করে সেই বিতর্কের ইতি টানতে পারলাম আমরা। এখন থেকে এই গড়ের নাম কোচবিহার রাজ্যের রাজা নরনারায়ণের নামে হবে। নাম পরিবর্তন নিয়ে একটি বুকলেট বের করা হবে বলে জানান তিনি। সেখানে কারা কবে কেন এই নাম পরিবর্তন করলেন তার সবটাই থাকবে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজবংশী উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বোর্ডের চেয়ারম্যান বংশীবদন বর্মন বলেন, নল রাজার গড়ের সংস্কারের উদ্যোগের খবর দেখে আমি রাজ্যের হেরিটেজ কমিশনকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। সেই চিঠিতে নল রাজা নিয়ে একটি বিভ্রান্তির কথা উল্লেখ করেছিলাম। তার পর বৈঠক করে এই বিভ্রান্তি মেটানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। আসলে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ণের আমলে তাঁর ভাই চিলা রায় এই ঐতিহাসিক সেনা ছাউনি বা গড় তৈরি করেছিলেন। সেই কারণে এখন থেকে এই গড়ের নাম মহারাজা নরনারায়ণ গড় হবে। আমি চাই সেখানে মহারাজা নরনারায়ণ ও বীর সেনাপতি চিলা রায়ের মূর্তি বসুক।
আরও পড়ুন: হঠাৎ হাহাকার নদীর পাড়ে! ডুবে গেল কৃষকবোঝাই নৌকা, নিখোঁজ যুবককে ঘিরে চাঞ্চল্য
বিষয়টি নিয়ে বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যের সংরক্ষন ও সংস্কারের দাবিতে গত ১৬ জুন বিধানসভায় আমি মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানাই। তার পরই হেরিটেজ কমিশনের মাধ্যমে এই গড় সংরক্ষণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই গড়ের নাম নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্নরকম তথ্য দিচ্ছিলেন। অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান করে ফেললাম আমরা। ফলে সব বিভ্রান্তি কাটিয়ে এবার এই গড় সংস্কার ও সংরক্ষণের কাজ এগিয়ে যাবে।