এদিন ধৃত আনিসুর লস্করের সঙ্গে দলের যে কোনও রকমের যোগাযোগ থাকার কথা এককথায় অস্বীকার করে দেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী৷ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘‘আনিসুর লস্কর বলে সিপিএমের কোনও পার্টি মেম্বার আছে বলে আমার জানা নেই।’’
সুজন চক্রবর্তীর অভিযোগ, জয়নগর খুনের ঘটনায় আসল অভিযুক্তকে নাকি গ্রেফতারই করতে পারেনি পুলিশ, তার বদলে তদন্তের অভিমুখ অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা চলছে৷ সুজনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘(আনিসুর) আমাদের সমর্থক কেউ হতে পারেন। পুলিশ জয়নগর খুনের ঘটনায় আসল দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে পারেনি। তদন্তের মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে। প্রকৃত দুষ্কৃতীদের আড়াল করা হচ্ছে। তৃণমূল যা বলছে পুলিশ তাই করছে। হয়ত কেউ বিক্রি হতে চাননি, তাই তাঁকে এই সুযোগে গ্রেফতার করা হচ্ছে।’’
advertisement
গত সোমবার সাত সকালে জয়নগরের বামনগাছিতে নিজের বাড়ির সামনেই খুন হন এলাকার পরিচিত তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর৷ এই খুনের পিছনে সরাসরি স্থানীয় সিপিএম কর্মীদেরই দায়ী করেন সইফুদ্দিনের বাবা ইলিয়াস লস্কর৷ তৃণমূল নেতার খুনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্রমে উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়৷ অভিযোগ, সোমবারই সকাল ৭টা নাগাদ বামনগাছি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দোলুয়াখাঁকি নস্কর পাড়া এলাকায় হামলা চালায় তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। পুড়ে ছাই হয়ে যায় কমপক্ষে ৩০-৪০টি বাড়ি৷ এই এলাকায় মূলত সিপিএম কর্মীদের বাস বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।
বৃহস্পতিবার, ঘটনার দিনের সেই অগ্নি সংযোগের প্রসঙ্গও তোলেন সুজন৷ এদিন মালদহের একটি কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন সুজন৷ সেখানেই মালদহে বললেন সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার দূরে গ্রামে আগুন জ্বালানো হচ্ছে। সবই তৃণমূলের কাজ। মাস্টারমাইন্ড গ্রেফতার বলে পুলিশ যে কৃতিত্ব দাবি করছে তা আসলে তৃণমূলের কথাতেই।’’
জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের খুনের ঘটনায় বৃহস্পতিবার মূল অভিযুক্ত আনিসুর লস্করকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ এলাকায় সিপিএম কর্মী হিসাবে পরিচিত এই আনিসুরকে নদিয়ার হরিণঘাটা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ আনিসুর ছাড়াও এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও চারজনকে আটক করা হয়েছে৷ যদিও তাদের পরিচয় এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি৷
পুলিশ সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুন করার পিছনে ‘মাস্টারমাইন্ড’ ছিল আসলে এই ‘সিপিএম কর্মী’ আনিসুর লস্কর৷ এই আনিসুরও দলুয়াখাঁকির বাসিন্দা। সইফুদ্দিন খুন হওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিল এই ‘সিপিএম কর্মী’৷ মোবাইল টাওয়ারের লোকশন ধরে চলছিল খোঁজ। সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে টাওয়ার লোকেশন পায় পুলিশ। কিন্তু, পুলিশ পৌঁছনোর আগেই সেখান থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় আনিসুর।
এরপরে পুলিশের কাছে খবর আসে নদিয়ার রানাঘাটে গা ঢাকা দিয়েছে আনিসুর। সেখানেও জোরদার তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। পরবর্তীকালে নদিয়ার রানাঘাটে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় আনিসুর লস্করকে। নিহত তৃণমূল নেতার পরিবারের পক্ষ থেকে যে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, সেখানেও নাম রয়েছে এই আনিসুরের।