ডিন অফ স্টুডেন্টসকে উদ্দেশ্য করে লেখা সেই চিঠিতে, ক্যাম্পাসের জনৈক ‘রুদ্র দা’র কথা বলা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, সেই সিনিয়র নাকি হস্টেল নিয়ে ওই ছাত্রকে অযথা ভয় দেখিয়েছে৷ বলেছে, ওই হস্টেলে থাকলে দাদাদের ফাই-ফরমাশ খাটতে হয়, না খাটলে ছাত্রদের দোতলা-তিন তলা থেকে ঝাঁপ দিতে হয়৷ তবে ওই চিঠির সত্যতা যাচাই করেনি নিউজ ১৮ বাংলা৷ যে চিঠিটি সামনে এসেছে, তা আদৌ মৃত পড়ুয়া লিখেছিলেন কি না না নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু হয়েছে৷ জানা গিয়েছে, ওই চিঠিতে থাকা বয়ানের সঙ্গে বুধবার রাতে ডিন অফ স্টুডেন্টসের কাছে যাওয়া ফোনের বয়ানের মিল রয়েছে৷ যা নতুন করে বাড়াচ্ছে জল্পনা৷
advertisement
আরও পড়ুন: মৃত ছাত্রের ডায়েরির চিঠি ঘিরে নতুন রহস্য, ৯ তারিখকে কেন ১০ করা হল? মেলানো হবে হাতের লেখা
ইতিমধ্যেই মৃত ছাত্রের বাবা অবশ্য জানিয়েছেন, ওই চিঠিতে থাকা হাতের লেখা তাঁর ছেলের নয়৷ তদন্তের মোড় ঘোরাতেই এই কারসাজি করেছেন অভিযুক্তেরা৷ এমনকি, চিঠির নীচে থাকা ছাত্রের স্বাক্ষর নিয়েও সন্দেহ রয়েছে৷ পুলিশের তরফে ওই ছাত্রের পুরনো খাতা বা হাতের লেখার নমুনা পরিবারের কাছ থেকে চেয়ে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷ সেই হাতের লেখা পেলে, ডায়েরিতে থাকা হাতের লেখার সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখা হবে৷
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, ওই ছাত্র কোনও ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তবর্তী দলীয় ছাত্র রাজনীতির শিকার নয়তো? কারণ সূত্রের খবর, যাদবপুরের মেন হস্টেল, যেখানে ওই ছাত্র থাকছিলেন এবং যেখান থেকে তাঁকে বুধবার রাতে নগ্ন ও রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, সেখানে কিছু স্বাধীন সংগঠনের দাপট রয়েছে৷ অন্যদিকে, ওই চিঠিতে লেখা ‘রুদ্র’ সম্ভবত রুদ্র চট্টোপাধ্যায়, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য একটি বাম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত৷ তাহলে কি জোর করে বিরোধী সংগঠনের ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে মৃত ছাত্রকে দিয়ে ওই চিঠি লিখিয়েছিল হস্টেলের দাদারা? উঠছে প্রশ্ন৷
আরও পড়ুন: মাটির বাড়ি, চায়ের দোকান থেকেই চলে সংসার যাদবপুর কাণ্ডে ধৃত মনোতোষের
এই ‘রুদ্র’ যদি, রুদ্র চট্টোপাধ্যায় হন, তিনি জানিয়েছেন, তিনি ওই হস্টেলে থাকেন না৷ থাকেন ক্যাম্পাস থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে নিজের বাড়িতে৷ তিনি জানিয়েছেন, গত ৭ অগাস্ট ওই ছাত্র যখন তাঁর বিভাগে এসেছিলেন, তখন তাঁর সঙ্গে ৩-৪ মিনিট কথা হয়েছিল তাঁর৷ সেখানে তিনি মফসসল থেকে কলকাতায় পড়তে আসা একটি ছেলেকে খুব স্বাভাবিক ভাবেই সতর্ক এবং সাবধান করেছিলেন৷ বলেছিলেন, চেনা মানুষজনদের নিয়েই থাকতে৷ কোনও রকমের হুমকি তিনি দেননি বলেই দাবি তাঁর৷
রুদ্র বলেন, ‘‘মেন হস্টেলে র্যাগিং করে৷ সেখানে সাবধানে থাকবি৷ যাদের চিনিস তাঁদের নিয়ে থাকবি৷ সাবধানে থাকিস ভাই৷ এই টুকুই বলেছিলাম৷ এরপর ৮ তারিখে দেখা হয়, কিন্তু কথা হয়নি৷’’ এরপর ঘটনার আগে পর্যন্ত ওই ছাত্রের সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে বা সামনাসামনি তাঁর কথা হয়নি বলেই দাবি করেছেন রুদ্র৷ পাশাপাশি, রুদ্রের মতে, তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতেই হয়ত এই চিঠি লেখা হয়েছিল৷
গত শনিবারই মৃত ছাত্রের একটি ডায়েরি হস্টেলের ঘর থেকে পান তদন্তকারীরা৷ সেই ডায়েরিতে লেখা চিঠি ঘিরেই এবার নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা৷ দেখা গিয়েছে, সেই চিঠির গোটাটাই টানা এক ভাবে লেখা হলেও তারিখের জায়গায় ডাবল রাইটিং পাওয়া গিয়েছে৷ তারিখের জায়গায় লেখা রয়েছে ১০ অগাস্ট৷ অভিযোগ, ৯ অগাস্টের উপরে নতুন করে ১০ আগস্ট করা হয়েছে সেখানে৷
কিন্তু, গত ৯ অগাস্টই যাদবপুরের মেন হস্টেলের নীচে নগ্ন, রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় ওই ছাত্রটিকে৷ পরের দিন ভোরেই মৃত্যু হয় তাঁর৷ এর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, যে ৯ অগাস্ট ঘটনা ঘটলে, চিঠির তারিখ কেন ১০ অগাস্ট করা হয়েছিল৷ তাহলে কি অভিযুক্ত ছাত্রেরাই তথ্যপ্রমাণ হেরফের করার চেষ্টা করেছিলেন?