জয়ের পরে এই উপ নির্বাচনে তৃণমূলের অন্যতম কাণ্ডারী শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বললেন, ‘‘আমরা প্রত্যয়ের সঙ্গে কাজ করেছি৷ দিন যত এগিয়েছে ততই আমাদের ভোট বেড়েছে৷ দলীয় নেতৃত্ব যে হিসাব কষেছিলেন, সেইরকমই ফলাফল হয়েছে৷ চব্বিশেও দার্জিলিঙের সব লোকসভা আসনে আমরাই জিতব৷’’ ধূপগুড়ির জয়ের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন অভিষেকেও৷
advertisement
দিনের শুরুটা অবশ্য ভালই ছিল বিজেপির৷ ব্যালট পেপারে হার হয়েছিল তৃণমূলের৷ তারপরে প্রথম এবং দ্বিতীয় রাউন্ডেও এগিয়ে ছিল পদ্মশিবির৷ কিন্তু, তৃতীয় রাউন্ডের শেষে মাত্র ১০১ ভোটে হলেও তাদের চেয়ে এগিয়ে যায় শাসকদল৷ তারপরে পঞ্চম রাউন্ডে এসে খানিকটা ফেরার চেষ্টা করলেও, সপ্তম রাউন্ডের গণনার শেষে স্পষ্ট হয়ে যায় গোটা ছবিটা৷ তৃণমূলের নির্মলচন্দ্র রায়ের পক্ষেই ‘রায়’ দেন ধূপগুড়ির মানুষ৷
এখানে লড়াইয়ে ছিলেন তিন দলের তিন রায়। কংগ্রেস সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র রায় স্থানীয় লোকশিল্পী এবং অবশ্যই রাজবংশী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী মিতালি রায়কে টিকিট না দিয়ে স্থানীয় রাজবংশী অধ্যাপক নির্মলচন্দ্র রায়ের উপরেই ভরসা রেখেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব৷ অন্যদিকে, পুলওয়ামা কাণ্ডে নিহত সেনার স্ত্রী তাপসী রায়কে প্রার্থী করেছিল বিজেপি৷
ত্রিমুখী লড়াইয়ে প্রথম থেকেই রাজবংশী ভোটে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল প্রত্যেক রাজনৈতিক দলই৷ যদিও এদিন শুরু থেকেই লড়াইয়ে তেমন ভাবে নামতেই পারেননি জোট প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র৷ পঞ্চম রাউন্ডের শেষেই কার্যত বিদায় নিতে হয় তাঁকে৷
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৪ হাজারের সামান্য বেশি এই আসনেই ভোটে জয়ী হয়েছিল সিপিআইএম। ২০১৬ সালে ১৬ হাজার ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল। ২০২১-এ বিজেপি জেতে ৪ হাজার ৩৫৫ ভোটে । ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে ধূপগুড়িতে জয়ী হন বিজেপির বিষ্ণুপদ রায়। হারিয়ে দেন তৃণমূলের মিতালি রায়কে। বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপদের মৃত্যুর কারণেই ধূপগুড়িতে উপনির্বাচন হয়।
তেইশের পঞ্চায়েত ভোটে ধূপগুড়িতে পদ্মকে টেক্কা দিয়েছিল ঘাসফুল। ধূপগুড়ি বিধানসভা এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতি ধূপগুড়ি। এই পঞ্চায়েত সমিতিতে ২৭টি আসন। তেইশের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল ১৯ এবং বিজেপি ৮টিতে জয় পেয়েছিল।
২০১৮-র লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই উত্তরবঙ্গে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে গেরুয়া শিবির৷ সংগঠনের নিরিখে উত্তরবঙ্গ বিজেপির অন্যতম জোরের জায়গা৷ কিন্তু, সেই কড়া ঠাঁই এবার ধীরে ধীরে ভাঙার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল৷ চব্বিশের নির্বাচনের আগে ধূপগুড়ির এই জয় যে সেই চেষ্টায় বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে, এমনটা বলাই যায়৷