#শিলিগুড়ি: মঙ্গলবারের সকাল। উত্তরবঙ্গের দুই জায়গায় দুই ছবি। শিলিগুড়ির খড়িবাড়ির বাতাসি স্টেশনের কাছে ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেল দুটি হাতি। তবে সেবক ও গুলমা স্টেশনের মাঝে চালকের তৎপরতায় প্রাণ বাঁচল ২ গজরাজের।
ফের ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু। মঙ্গলবার ভোর ৫চটা নাগাদ শিলিগুড়ির খড়িবাড়ির বাতাসি স্টেশনের কাছে ডাউন শিলিগুড়ি কাটিহার ইএমইউ ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারায় দুটি হাতি। তারমধ্যে একটি হাতি অন্তঃসত্ত্বা ছিল বলে জানিয়েছে বন দফতর। রেল লাইন পারাপারের সময়ে দূর্ঘটনাটি ঘটে। ট্রেনের গতিকেই দায়ী করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। বন দপ্তরের অভিযোগের আঙুলও রেলের বিরুদ্ধেই। অন্যদিকে পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের দাবী, রেল এবং বন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই ফের মৃত্যু হল বন্যপ্রাণীর।
advertisement
এই বছরেই সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ভারত-নেপাল সীমান্ত লাগোয়া বাতাসি, পানিট্যাঙ্কি, নকশালবাড়ি এলাকায় বুনো হাতির পালের দাপাদাপি চলে। রসদের সন্ধানেই জঙ্গলের বেড়াজাল টপকে চলে আসে লোকালয়ে। হাতির দাপটে কার্যত গ্রামবাসীদের ঘুম উড়ে যায়। কাঁচা থাকতেই ধান কেটে নেয় তাঁরা।
গতকাল রাতেও ৪০-৫০টি হাতির পাল লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। শিলিগুড়ি থেকে কাটিহারগামী ৭৫৭৪৪ ডাউন প্যাসেঞ্জার ট্রেনের ধাক্কায়। রেল লাইন থেকে কয়েক ফুট দূরে ছিটকে পড়ে দুটি হাতি। বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙে স্থানীয়দের। তখনও হাতি দুটির করুণ আর্তনাদ করছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি একটি হাতিকেও।
খবর পেয়ে বন দপ্তরের টুকুরিয়া এবং বাগডোগরা রেঞ্জের রেঞ্জার-সহ বন কর্মীরা আসেন। কার্শিয়ংয়ের ডি এফ ও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। আসেন পশু চিকিৎসকও। দুটি হাতিরই পেছনের পায়ে গভীর ক্ষত ছিল। ময়না তদন্তের পর রেল লাইনের ধারেই অন্তেষ্টিক্রীড়া সম্পন্ন হয়।
চলতি বছরেই ডুয়ার্সের নাগরাকাটা, আলিপুরদুয়ার এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় হাতি-সহ বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর আগেও ট্রেনের গতির বলি হয়েছে বন্যপ্রাণী। বহুবার রেল, বন দপ্তর, পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ঠেকানো যায়নি বন্যপ্রাণের মৃত্যুর ঘটনা। গত এক মাস ধরে শিলিগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার যাওয়ার পথে জঙ্গল লাগোয়া রেল লাইনে চালকদের তৎপরতায় হাতি মৃত্যু ঠেকানো গিয়েছে।
গতকালও এমন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আজ ভোরে একে ছিল কুয়াশার চাদর। তারপর ট্রেনের গতি বেশী থাকায় রক্ষে পেল না ২টি হাতি বলে দাবী স্থানীয়দের। ট্রেনের চালক তৎপর হলে বাঁচানো যেত দুটি হাতিকে বলছে স্থানীয়রা। কেননা ঘটনাস্থল হাতি করিডর হিসেবেই পরিচিত। প্রতিদিনই এই সময়ে লোকালয় থেকে জঙ্গলে ফেরে হাতির পাল। সেক্ষেত্রে ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রিত থাকা আবশ্যক ছিল। কিন্তু তীব্র গতি ছিল বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন কার্শিয়ংয়ের ডিএফও। অন্যদিকে পরিবেশপ্রেমী সংগঠন অবশ্য এজন্য রেল এবং বন দপ্তরের সমন্বয়ের অভাবকেই দায়ী করেছে। দ্রুত ট্রেনের গতি নিয়ন্ত্রণ করার দাবী তুলেছে তারা।