এর পর, মহারাষ্ট্রের অধুনা পুনে শহরের কাছে সেই জঙ্গল থেকে আদিবাসীদের সেই কালীকে খুঁজে পান বাংলাদেশের সাতক্ষীরার জমিদার বংশোদ্ভূত পুণায় নিযুক্ত এক ফরেস্ট অফিসার। তার পর তিনি সেই মূর্তি নিয়ে গিয়ে সাতক্ষীরায় নিজের বাড়িতে প্রতিস্থাপন করেন। সেই মূর্তি দেখতে পান সাধক বামাক্ষ্যাপার প্রধান শিষ্য তথা বসিরহাটের স্বরূপনগর ব্লকের হঠাৎগঞ্জের বাসিন্দা তারাক্ষ্যাপা।
advertisement
তখন তিনি ওই ফরেস্ট অফিসারকে ওই মূর্তি স্থাপন করতে নিষেধ করেন এবং তিনি এও বলেন যদি এই মূর্তি বাড়িতে পুজো করা হয় তাহলে গ্রামে নামবে মহামারি ও ক্ষতি হবে তাঁর পরিবারেরও। সেই আদেশ দিয়ে তারাক্ষ্যাপা তীর্থ করতে ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। আর এদিকে তারাক্ষ্যাপার কথাকে অমান্য করে বাড়িতে মূর্তি প্রতিস্থাপনের পর সাতক্ষীরার সেই গ্রামে শুরু হয়ে যায় মহামারি এবং একের পর এক পরিবারের লোককে হারিয়ে সর্বস্বান্ত হন ওই ফরেস্ট অফিসারও।
আরও পড়ুন : আজ রাতে কালীপুজো, কত ক্ষণ থাকবে অমাবস্যা, জানুন পঞ্জিকা কী বলছে
তার পর তিনি জানতে পারেন তারাক্ষ্যাপা রয়েছেন বারাণসীতে। সেখানে গিয়ে তারাক্ষ্যাপাকে অনুরোধ করেন ওই মূর্তিটি নিজের কাছে রাখার জন্য। কথা মতো তারাক্ষ্যাপা সাতক্ষীরার ওই বাড়ি থেকে কষ্টিপাথরের কালী মাকে নিয়ে আসেন অধুনা বসিরহাটের ছ'নম্বর ওয়ার্ডের ইছামতী নদী সংলগ্ন আশ্রমপাড়া শ্মশানে। সেখানে তারাক্ষ্যাপা ওই মূর্তিকে আনন্দময়ী রূপে প্রতিষ্ঠা করেন।
অপরদিকে, ভবানী পাঠকের কাছে ছিল এক কাঠের তারা মায়ের মূর্তি। তার পর তিনি দারস্থ হন তারাক্ষ্যাপার কাছে। তারাক্ষ্যাপা সেই তারা মাকে নিয়ে আসেন নিজের বসিরহাটের বাড়িতে। পরে তারাক্ষ্যাপা নিম কাঠের তৈরি ওই তারা মাকে প্রতিষ্ঠা করেন ওই একই জায়গায় কষ্টিপাথরের কালী মায়ের পাশে। তারপর থেকেই ওই এলাকাটি জোড়া কালী মন্দির নামে পরিচিত। যেখানে রয়েছে কষ্টিপাথরের আনন্দময়ী কালীমা ও তার পাশে রয়েছে নিম কাঠের তারা মা।
আরও পড়ুন : কালীপুজোর রাতে রসনাতৃপ্তিতে পাতে পড়ুক যজ্ঞি বাড়ির পাঁঠার মাংস, রইল রেসিপি
এই দুই মন্দিরে শ্যামা পুজোর দিন সাড়ম্বরে প্রথা মেনে পুজো করতেন মণি মোহন গোস্বামী ওরফে তারাক্ষ্যাপা। সেই প্রথা আজও চলে আসছে। আজও তান্ত্রিক মতে দুই মায়ের পুজো করা হয়। মাকে ভোগ দেওয়া হয় ইছামতীর মাছ, খাসির মাংস ও হাঁসের ডিম। পাশাপাশি শ্যামা পুজোর দিন বলি প্রথারও প্রচলন রয়েছে। এই পুজোর প্রবর্তক তথা তারাক্ষ্যাপার সমাধি আজও সেখানকার তারাতীর্থ মায়ের মন্দিরের নীচে অধিষ্ঠিত রয়েছে। যা আগত ভক্তদের কাছে এক হয়ে উঠেছে পুণ্যতীর্থ।