রুদ্র নারায়ন রায়, উত্তর ২৪ পরগনা: ডানলপ মোড়ে ফুটপাতে দিন কাটানো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকার করুন পরিনতির কথা ইতিমধ্যেই সকলের জানা। ঠিক সেরকমই, \" যত জ্ঞানী হবে ততই দুঃখ পাবে \" বিখ্যাত এক রুশ লেখকের উক্তি উদাহরণ দিয়ে নিজের জীবনের করুন কাহিনী শোনালেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক প্রাক্তন অধ্যাপিকা সংগীতা দাশগুপ্ত। কুড়ি বছরের বেশি অধ্যপনার করে আজ নিঃস্ব রিক্ত। প্রাপ্য টাকা আজও পাননি কোনো এক অজ্ঞাত কারণে। অসুস্থ অধ্যাপিকার অপরের দয়ায় আজ দিন কাটছেন বারাসাত পুরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডের অশোক কলোনির বাড়িতে। কমিউনিস্ট পরিবারে জন্ম সংগীতাদেবীর বাবা অমিয় দাশগুপ্ত এবং মা সুজাতা দাশগুপ্ত ছিলেন অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঠাকুরদা কমিউনিস্ট করার অপরাধে, মাত্র ১৪ বছর বয়সে তার বাবা অমিয় দাশগুপ্ত কে ব্রিটিশ পুলিশ শিকল দিয়ে বেঁধে জেলে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার পরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে উচ্চপদে চাকরি তে যোগ দেন। মা সুজাতা দেবী ছিলেন শিক্ষিকা। একমাত্র ভাই অমিয় দাশগুপ্ত ছিল উচ্চপদাসীন ব্যাঙ্ক অফিসার। বিদেশে থাকলেও ১৯৯১ সালে রাশিয়ার অন্তর্দেশীয় অস্থিরতার কারণে ভারতে ফিরে আসেন সংগীতা দেবী। ১৯৯২ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিয়ান ভাষার অধ্যাপিকা হিসাবে যোগ দেন। প্রায় ২৪ বছর পর ২০১৬ সালে চাকরি জীবন থেকে অবসর নেন। পিএফ, গ্রাচুইটি পেলেও পেনশন পাননি এখনো। সরকারি আইনের জটিলতা নাকি অন্য কোনো কারণ তা নিয়ে বলতে না চাইলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে ইচ্ছুক সংগীতা দেবী। তার প্রাপ্য টাকা সহ বাবা- মা এবং ভাইয়ের সমস্ত টাকা রাস্তার সারমেয় সহ বিভিন্ন পথ পশুদের ভরণপোষণের পিছনে শেষ করে দিয়েছেন। বাড়িতে পশু পুনর্বাসন কেন্দ্র খুলে বিরাগ ভাজন হয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুরসভার প্রতিনিধিদের কাছে। তবু নিজের আদর্শ নীতি থেকে সরে আসেনি। গত নভেম্বরে পথ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ভেঙে যায় কোমরের হাড়। তারপর থেকেই শয্যাশায়ী সংগীতা দেবীর দুবেলা খাবার সংস্থান করা অসম্ভব হয়ে গেছে। এক সময়ে তার বিরোধীতা করা প্রতিবেশীরাই এখন তার রক্ষাকর্তা। পাড়া প্রতিবেশী সহ সকলের অনুরোধ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যদি উদ্যোগ নিয়ে সংগীতা দেবীর চিকিৎসা সহ যাবতীয় খরচের ভার বহন করে, পাশাপাশি সঙ্গীতা দেবীর যাবতীয় বকেয়া পাওনা টাকা ফিরিয়ে দিয়ে শেষ জীবনে সুস্থভাবে বাঁচার রাস্তা করে দিক। (প্রতিবেদক - রুদ্র নারায়ন রায়)
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপিকা সঙ্গীতা দাসগুপ্ত