বুকে আগুন নিয়ে জন্মানো নেতাজি বুঝতে পেরেছিলেন মিষ্টি কথায় চিঁড়ে ভেজানোর দিন শেষ। তিনি বিশ্বাস করতেন সশস্ত্র বিপ্লবে। একজন নেতা সে-ই হয়, যিনি সবাইকে নিয়ে পথ চলতে সক্ষম হন। বলাই বাহুল্য, নেতাজির মধ্যে একজন সত্যিকারের নেতা হওয়ার সব রকম গুণ ছিল। তাই তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল আসমুদ্র হিমাচল। তিনি যেমন সবাইকে একত্রিত করে গড়ে তুলেছিলেন আজাদ হিন্দ ফৌজ (Azad Hind Fauj), তেমনিই তাঁর অসামান্য বাগ্মিতায় মুগ্ধ ছিলেন দেশবাসী। ভারতীয়রা বিশ্বাস করেন সুভাষ বসু আজও বেঁচে আছেন। আর এই বিশ্বাসের পিছনে লুকিয়ে আছে নেতাজির প্রতি তাঁদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
advertisement
আজ তাঁর জন্মদিনের পুণ্যলগ্নে এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক তাঁর অবদান।
একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে:
একজন দক্ষ কূটনীতিক হিসেবে অনবদ্য ছিলেন নেতাজি। শত্রুর শত্রু যে বন্ধু হয় এই প্রবাদে বিশ্বাস করে নানা দেশের কাছে ব্রিটিশদের তাড়াতে সহায়তা চেয়েছিলেন তিনি। দু'বার জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর কাজের পদ্ধতি ও আগ্রাসী মনোভাবের জন্য বিরোধ সৃষ্টি হয় মহাত্মা গান্ধীর (Mahatma Gandhi) সঙ্গে। পরে সুভাষ কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে ফরওয়ার্ড ব্লক (Forward Block) তৈরি করেন।
একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে:
নেতাজি বুঝতে পেরেছিলেন ব্রিটিশদের অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁদেরও অস্ত্র তুলে নিতে হবে। জাপান ও জার্মান সরকারের কাছ থেকে তিনি নানা বিষয়ে সহায়তা চেয়েছিলেন। ১৯৪৩ সালে তাঁর প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (Indian National Army) বা আইএনএ।
পূর্ণ স্বরাজের প্রবক্তা:
গান্ধী ও তাঁর অনুগামীদের মতো হোম রুল চাওয়ার পরিপন্থী ছিলেন নেতাজি। যা তাঁর নিজের, তার জন্য কেন তিনি ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করবেন, এ তাঁর বোধগম্য ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন পূর্ণ স্বরাজ।
নেতাজি ছিলেন জননেতা:
দেশ-বিদেশ জুড়ে নানা বরেণ্য নেতা ও নেত্রীর সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন একজন যথার্থ জননেতা। শুধু রাজনৈতিক কারণেই নয়, যে কোনও জনকল্যাণমূলক কাজে নেতাজি একবার ডাক দিলেই লক্ষ প্রাণ হাজির হয়ে যেত। তিনি ছিলেন মানুষের নেতা।
নারীদের চেতনা উন্মেষ করার প্রবক্তা:
নেতাজি কখনওই চাননি যে পুরুষরা যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে প্রাণ দেবেন আর মেয়েরা বাড়িতে বসে চোখের জল ফেলবেন। ভারতের অসংখ্য সাহসিনীরাও যে দেশের সম্পদ, সেটা বুঝেই তাঁদেরকে দেশের কাজে এগিয়ে আসার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন সুভাষ। তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের মহিলা বাহিনীর নাম ছিল ঝাঁসির রানি।